Manabota

Manabota

শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১২

একজন আপু এবং ফেইসবুক

আপুকে প্রায়ই দেখতাম বালিশে মাথা রেখে কান্না করত। মাঝে মাঝে দেখতাম বারান্দায় দাড়িয়ে কি যেন ভাবত। মাঝে মাঝে যখন বৃষ্টি হত, দেখতাম আপু লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করত কেউ কাছে আসলে চোখের পানি মুছে ফেলত।
ব্যাপারগুলো বাসার কেউ বুঝতে পারত না। কিন্তু আমার চোখে ঠিকই ধরা পড়ত। কখনো আপুর কাছে জানতে চাইতাম না কি হয়েছে আপুর। ভাবতাম আপুর কাছে যদি জানতে চাই তাহলে আপুর হয়ত মন খারাপ হয়ে যাবে আরও বেশি। কিন্তু সত্যি বলতে কি আমার অনেক জানতে ইচ্ছা করত কি হয়েছে আপুর??
আমার সাথে আপুর বয়সের ব্যাবধান ৭ বছরের। আপু তখন ভাসিটিতে তৃতীয় বছরের পড়ছে তখনকারা ঘটনা। আপুকে যখন কাঁদতে দেখতাম তখন আমার অনেক কান্না পেত। কেন যেন নিজের অজান্তে আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ত। আপনজন কাউকে কাঁদতে দেখলে বেশি খারাপ লাগে। আর আমার পরিবারে আপুই আমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করত। তাই আপুর প্রতি আমার বিশেষ মায়া ছিল। আমি যা চাইতাম আপু আমাকে তা কিনে দিত। আমি যদি খুব দামি কোন খেলনা চাইতাম আপু নিজের টাকা জমিয়ে জমিয়ে আমাকে কিনে দিত। এক কথায় ধরতে গেলে আপুই আমার পৃথিবী। কিন্তু আপুর হঠাৎ এই চুপচাপ ভাবে থাকাটা আমার সহ্য হচ্ছিল না। আগে আপু কত হাসত এখন আমার কথায় উওর হ্যা হু-এর মধ্যে সীমাবন্ধ করে রাখছে আপু। আগের ঘুমানো সময় আপুর কাছে গল্প শুনে ঘুমাতে যেতাম । এখন গল্প শুনতে বললে আপু বলে,”আমি গল্প ভুলে গেছি”
মন খারাপ করে ঘুমাতে যেতাম। আর ভাবতাম আপুর কি হয়েছে? আমার এত ভাল আপুটার কি হয়েছে? বাসার অন্য সবার সাথে আপু এত বেশি মিশত না। সারা দিন নিজের বাসায় পিসি সামনে বসে থাকত না হলে পড়াশুনায় মগ্ন থাকত।
একদিন আমি ক্লাস থেকে বাসায় আসলাম । আপুর জন্য ডেইরী মিল্ক নিয়ে এসেছিলাম। আপু চকলেট খেতে অনেক বেশি পছন্দ করে। তাই ভাবলাম চুপি চুপি আপুর রুমে গিয়ে বালিশের নিচে চকলেট রেখে দিব। আপু যখন দেখবে তখন অবাক হয়ে যাবে। তাই আমি আস্তে আস্তে আপুর রুমে গেলাম। দরজা একটু ফাকা করতে দেখি আপু পিসিতে বসে আছে। আমি আস্তে আস্তে দেখলাম আপু ফেসবুকে কাউর সাথে চ্যাট করছে। আমি আবাক হয়ে দেখলাম আপু কী-বোর্ডে লিখছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমার আসার শব্দ শুনে আপু তাড়াতাড়ি রুমাল দিয়ে চোখে মুছে বলে,” ওহ তুই ??” এরপর তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল। যাওয়ার সময় আপু ফেসবুক থেকে লগআউট হয়নি। আমি এই সুযোগে আপুর ফেসবুকে দেখলাম একটি ছেলের সাথে চ্যাট করছে। ছেলেটি নাম লিখা “নীল রহমান “ আমি চ্যাট গুলো পড়া শুরু করলাম।
সবশেষে লেখাটি আপু লিখছে ”তুমি কি সত্যি আমাকে রেখে চলে যাবে??”
নীল ,” হ্যা আজ থেকে আমাদের ব্র্যাক-আপ”
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না আসলে কী হয়ছে। আপুর মন খারাপের তাহল এইটাই কারন। হঠাৎ আপু চলে আসল এবং আপু বুঝে ফেলল আমি আমার ফেসবুকে চ্যাটগুলো পড়েছি।
আমার আমার কাছে এসে আমাকে একটা চড় দিয়ে বলল, “যা বাগ এখান থেকে”।
আমি আপুর চোখ দু’টোর দিকে তাকালাম। আপুর চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে। দেখিই বুঝা যাচ্ছে আপু অনেক কান্না কাটি করছে । আপু এই প্রথম আমাকে মারল। কখনো আমার গায়ে হাত দেয়নি আপু। সত্যি আমার অনেক খারাপ লাগব। নিজের রুমে এসে অনেকক্ষন কাঁদলাম। একটা ছেলের জন্য আপু আমাকে মারল, আমি কি এত খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি কত কিছু মাথায় আসা শুরু করল। সেই দিনের পর থেকে আপুর সাথে আমার দুরত্ব বাড়তে থাকল।
এর দু’মাস পরের ঘটনা।

আগে আপুর জন্য বিয়ে দেখলে আপু বলত আমি এখন বিয়ে করব না। আগে পড়াশুনা শেষ করি। আমার কি কোন পছন্দ থাকবে না ইত্যাদি টাইপের কথা বলত। কিন্তু এখন আপু সেই রকম কোন কথা বলে না । আম্মু – আব্বু যদি বলে আজ তোকে ছেলে দেখতে আসবে আপুর দেখতাম কোন ফিল ছিল না। বলত ,”ওহ আচ্ছা”।
এর কিছুদিন পর আমার আপুটির বিয়ে হয়ে গেল ব্যাংকার একটা ছেলের সাথে। বাবা -মা যা বলছে তাই করেছে। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি আপুর চোখে –মুখে সেই আনন্দ মাখা অনুভূতিটা নেই। এখনো মনে আছে বিয়ের
আগের দিন রাতে আপু কিছু সময়ের জন্য ফেসবুকে বসেছিল এবং ফেসবুক থেকে উঠে আপু ওয়াশরুমে গেল। বুঝতে বাকি রইল না আমার। সবার সামনে কান্না করার ভয়ে ওয়াশরুমে গেল। ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার পর আমি দেখি আপুর দু’চোখ লাল হয়ে আছে । সত্যি সেই দিন অনেক খারাপ লাগল। আপু সেই কান্না মাখে মুখটা আমি আজও ভুলতে পারব না। এরপর যথারীতি আপু চলে গেল অন্যের বাড়িতে। আমি বাসায় একা। আপুর সাথে মাঝে মাঝে ফেসবুকে কথা হয়। কিন্তু কখনো জানতে চাই না । বুঝতে পেরেছে ফেসবুকে কাউকে আপু খুব বেশি ভালবাসত। সেই ছেলেটির জন্য বেশি আসফোস হচ্ছে আমার আপুটির মত একজন ভাল মানুষকে হারাল। আমার সেই আগের আপুটিকে ফিরে পেতে চাই এখনো। যে আপুটি আমাকে গল্প বলে ঘুম পাড়াবে। আমার জন্য টাকা জমিয়ে খেলনা এনে দিবে। বাবা বকা দিলে আমার চোখের পানি মুছে দিবে। যখন রেজাল্টা খারাপ করতাম আপুর কাছে এসে হাউমাউ করে কান্না করতাম। আর আপু চোখের পানি মুছে দিয়ে বলত দূর বোকা কাঁদতে হয় নাই। পরের বার ভাল করবি। এটা ফেইসবুকের ঘটনা কেমন করে যেন আপুকে আমার কাছে থেকে দূরে নিয়ে গেল ।
বি:দ্র = লেখাটা র সময় অনেক আগের আপুর সেই পুরানো ঘটনাগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে আসল । আর অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আল্লাহ তুমি আমার আপুটিকে ভাল রেখ। আর সবাইকে প্লীজ অনুরোধ কাউর জন্য নিজের মন খারাপ করে নিজেকে কষ্ট দিবেন না। বিশেষ করে করে আমার মত ছোট ভাইদের যারা আপুদের একটু আদর, একটু ভালবাসা একটু গল্প শুনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে। যারা আপুটি কান্না মাখা মুখে দেখতে চায় না। দেখতে চায় আপনি হাসবে , গল্প করবে
এটি আমি লেখেছিলাম প্রিয়.কম এর “আমার ফেইসবুক জীবনি” নামক একটি প্রতিযোগিতার জন্য।
কিন্তু কোন পুরষ্কার পাই নি।লাইকের সংখ্যায় আমার লেখাটা পিয়েছি ছিল । মাএ ১৪০ টা লাইক পেয়েছি:(
আমার তো আর ৫০০০ বা ২০০০০ লাইক দেওয়া কোন পেইজ ছিল না যে শেয়ার করব :) আর পুরষ্কার না পাই সুন্দর এই লিখাটি আমার অনেক প্রিয় একটা লেখা যদিও এটি নিছক একটা গল্প মাএ।
অনেকদিন পর আজ সেই লেখাটি দেখে মনে হল আমার ব্লগেই লিখাটি দেইনি

গল্প : এক স্বামীর গল্প যিনি তার স্ত্রীর দিকে তাকাতেও লজ্জা পেতেন

[এ গল্পটি বলেছিলেন কার্ডিওভাসকুলার সার্জন প্রফেসর খালিদ আল জুবাইর, তারই এক লেকচারে। ]
… একবার আমি আড়াই বছরের এক বাচ্চার চিকিৎসা করি। এটা ছিল এক মঙ্গলবার এবং বুধবারে বাচ্চাটির স্বাস্থ্য বেশ ভালই ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ১১.১৫ এর দিকে … আমি কখনই ঐ সময়টার কথা ভুলতে পারবো না তখনকার প্রচন্ড আলোড়নের কারনে। এক নার্স আমাকে এসে জানালো যে একটি বাচ্চার হৃদযন্ত্র এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি বাচ্চাটির কাছে গেলাম এবং প্রায় ৪৫ মিনিটের মত কার্ডিয়াক মাসাজ করলাম। এই পুরো সময়টা জুড়ে হৃদপিন্ড কাজ করে নি।

তারপর, আল্লাহর ইচ্ছায় পুনরায় হৃদপিন্ড তার স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ শুরু করলো এবং আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম। আমি শিশুটির পরিবারকে তার অবস্থা সম্পর্কে জানাতে গেলাম। আপনারা হয়ত জানেন যে, রোগীর পরিবারকে তার খারাপ অবস্থা সম্পর্কে জানানোর বিষয়টা কতটা বিব্রতকর। একজন চিকিৎসকের জন্য এটা সবচাইতে কষ্টসাধ্য কাজগুলোর একটি যদিও এর দরকার আছে। তাই আমি বাচ্চার বাবাকে খুজতে লাগলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না। তখন আমি বাচ্চাটির মাকে দেখতে পেলাম। আমি তাকে জানালাম যে রোগীর গলায় প্রচুর রক্তক্ষরন হৃদপিন্ডের এই হঠাৎ অচলাবস্থার কারন; আমরা রক্তক্ষরনের সঠিক কারন বলতে পারছি না এবং আশংকা করছি তার মস্তিষ্ক মরে গেছে। … আপনাদের কি মনে হয়? এ কথা শুনে বাচ্চাটির মায়ের প্রতিক্রিয়া কি ছিল? সে কি কান্না শুরু করেছিল? আমাকে দোষারোপ করছিলো? না। এমন কিছুই হয় নি। বরং তিনি বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ! (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহতা’আলার)” এবং চলে গেলেন।

প্রায় ১০ দিন পর, বাচ্চাটি নড়তে শুরু করলো। আমরা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম এবং খুব আনন্দিত হলাম এ কারনে যে তার মস্তিষ্কের অবস্থা বেশ ভালই ছিল। ১২ দিন পর বাচ্চাটির হৃদযন্ত্র আবার বন্ধ হয়ে গেল সেই একই জায়গায় রক্তক্ষরনের ফলে। আমরা ৪৫ মিনিটের মত আরেকটা কার্ডিয়াক মাসাজ করলাম কিন্তু এবারে আর কাজ হল না, হৃদপিন্ড চালু হলো না। আমি বাচ্চার মাকে জানালাম যে, আর কোন আশা নেই। তখন সে বলল, “আলহামদুলিল্লাহ! হে আল্লাহ, যদি ওর সুস্থতায় কোন মঙ্গল থেকে থাকে তবে ওকে সুস্থ করে দাও, হে আমার প্রভু!”
আল্লাহর অশেষ রহমতে একটু পরে বাচ্চার হৃদপিন্ড আবার সচল হলো। একজন অভিজ্ঞ ট্রাকিয়া বিশেষজ্ঞ রক্তক্ষরন বন্ধ করতে সক্ষম হওয়ার পর হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা পর্যন্ত এই ছেলেটি আরো ৬ বার এরকম হৃদপিন্ডের অচলাবস্থার স্বীকার হয়েছিল। ইতোমধ্যে সাড়ে তিন মাসের মত হয়ে গেছে এবং বাচ্চাটি সুস্থ হচ্ছিল বটে কিন্তু চলাফেরা করতে পারছিল না। তারপর যখনই সে একটু  করে চলতে আরম্ভ করলো, এর চাইতেও অদ্ভুত এবং বিরাট আরেক মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিল তার, যা আমি কখনও এর আগে দেখি নি। আমি তার মাকে এই মারাত্নক ঝামেলার কথা জানালাম এবং তিনি কেবল বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ!” এবং চলে গেলেন।

আমরা অনতিবিলম্বে বাচ্চাটিকে অন্য একটি সার্জিকাল ইউনিটের হাতে তুলে দিলাম যারা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র নিয়ে কাজ করে এবং তারা বাচ্চাটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে লাগলো। তিন সপ্তাহ পর বাচ্চাটি মস্তিষ্কের জটিলতা কাটিয়ে উঠলেও নড়াচড়া করতে পারছিল না। আরো দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেল এবং এখন অদ্ভুত এক রক্তদুষনের স্বীকার হলো এবং শরীরের তাপমাত্রা প্রায় ৪১.২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে (১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট) উঠলো। আমি পুনরায় বাচ্চার মাকে এই ভীষন নাজুক পরিস্থিতির বিষয়ে অবহিত করলাম এবং তিনি বরাবরে মতনই ধৈর্য্য ও দৃঢতার সাথে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ! হে আল্লাহ, যদি ওর সুস্থতায় কোন মঙ্গল থেকে থাকে, তবে ওকে সুস্থ করে দাও।”
৫ নং বেডের বাচ্চার পাশে বসে থাকা এই মায়ের সাথে কথা শেষে আমি গেলাম ৬ নং বেডের আরেক শিশুর কাছে। এই শিশুটির মা কাঁদছিল এবং চিৎকার করছিল, “ডাক্তার! ডাক্তার! কিছু একটা করেন। আমার ছেলের শরীরের তাপমাত্রা ৩৭.৬ ডিগ্রী সেঃ (৯৯.৬৮ ডিগ্রী ফাঃ) সে মারা যাচ্ছে! সে মারা যাচ্ছে!” আমি অবাক হয়ে বললাম, “ঐ ৫ নম্বর বেডের মায়ের দিকে তাকান। তার সন্তানের ৪১ ডিগ্রী সেঃ (১০৬ ডিগ্রী ফাঃ) এর ওপরে জ্বর। এরপরেও উনি শান্ত রয়েছেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করছেন।” সে বললো, “ঐ মহিলার কোন বোধশক্তি নেই এবং কি হচ্ছে সে বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই।” ঠিক এই মুহুর্তে আমার মনে পড়ে গেল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর একটা হাদিসের কথা … “আগন্তুকদের জন্য সুসংবাদ!” কেবল দুইটি শব্দ … কিন্তু এই শব্দ দুটো নিঃসন্দেহে একটা পুরো জাতিকে আলোড়িত করবার ক্ষমতা রাখে। আমার দীর্ঘ ২৩ বছরের চিকিৎসা জগতের জীবনে এই  বোনটির মত ধৈর্য্যশীল আর কাউকে দেখি নি।
আমরা বাচ্চাটির যত্ন চালিয়ে যেতে লাগলাম এবং ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় মাস কেটে গেছে এবং বাচ্চাটি অবশেষে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বেরিয়েছে রিকভারি ইউনিট থেকে। হাটতে পারে না, দেখতে পায় না, শুনতে পাচ্ছে না, নড়তে পারছে না, হাসছে না … এবং এমন নগ্ন বুক নিয়ে বেরিয়ে এসেছে যেন হৃদপিন্ডের স্পন্দনগুলো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। শিশুটির মা নিয়মিত পোশাক পরিবর্তন করানো ইত্যাদি চালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং ধৈর্য্যশীল থাকলেন আর ছিলেন আশাবাদী।  আপনারা কি জানেন পরবর্তীতে এর কি হয়েছিল? আপনাদেরকে সে বিষয়ে বলবার আগে বলুন, এই শিশুটির সম্পর্কে আপনারা কি ধারনা করেন যে কিনা এত এত কঠিন রোগ-শোক, বিপদের মুখোমুখি  হয়ে এসেছে? এবং এই মৃত্যুপথযাত্রী শিশুর সহনশীল মায়ের কাছে আপনারা কি আশা করেন যার কেবল মাত্রা আল্লাহতা’আলার কাছে দু’আ আর সাহা্য্যের প্রত্যাশা করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না? আপনারা জানেন আড়াই বছর পর কি হয়েছিল? এই শিশুটি সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করে ছিল আল্লাহতা’আলার অশেষ রহমত এবং এই পরহেযগার মায়ের পুরষ্কার হিসেবে। সে এখন তার মায়ের সাথে দৌড়ে বেড়ায় যেন কোন দিনই তার কিছুই হয় নি এবং সে সুঠাম স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেছে যেমনটি আগেও ছিল।

গল্প এখানেই শেষ নয়। এটা সে জিনিস নয় যা আমাকে আলোড়িত করেছিল এবং আমার চোখে পানি নিয়ে এসেছিল। যে জিনিসটি আমায় কাদিয়েছিল তা হচ্ছে,
বাচ্চাটি হাসপাতাল থেকে বের হবার প্রায় বছর দেড়েক পর অপারেশন ইউনিটের একজন আমাকে জানালো যে একলোক, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সে বলল সে চেনে না। তো আমি তাদের দেখার জন্য গেলাম এবং দেখলাম এরা সেই ছেলেটির মা-বাবা আমি যার চিকিৎসা করেছিলাম। ছেলেটির তখন পাঁচ বছর এবং একটি ফুটফুটে ফুলের মতন স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেছে এরই মাঝে যেন তার কখনই কিছু হয় নি। তাদের কোলে চার মাস বয়সী আরেকটি ছোট বাচ্চা ছিল সেদিন। আমি তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালাম এবং কৌতুক করে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম এই কোলের বাচ্চাটি কি তাদের ১৩ তম নাকি ১৪ তম সন্তান। তিনি আমার দিকে চমৎকার এক হাসির সাথে তাকালেন যেন আমার জন্য তার করুণা হচ্ছে। তিনি বললেন, “সদ্য ভূমিষ্ট এই শিশুটি আমাদের দ্বিতীয় সন্তান, আর আপনি যার চিকিৎসা করেছিলেন সে ছিল আমাদের প্রথম সন্তান যাকে আমরা পেয়েছিলাম ১৭ বছরের অনুর্বরতার পর। এই শিশুটিকে পাবার পর, সে এমন সব বিপদের সম্মুখীন হয়েছে যা আপনি নিজেই দেখেছেন।“

একথা শুনে, আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না এবং এরই মাঝে আমার চোখ দুটো কান্নায় ভিজে উঠেছে। আমি তারপর হালকাভাবে লোকটির হাত ধরে টেনে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তার স্ত্রীর সম্পর্কে। “কে আপনার এই স্ত্রী যিনি ১৭ বছরের বন্ধাত্বের পর পাওয়া পুত্রের এত মারাত্নক সব বিপর্যয়ের মূহুর্তগুলোতেও প্রচন্ড ধৈর্য্যের সাথে মোকাবিলা করেছেন? তার অন্তর বন্ধা হতে পারে না। অবশ্যই সেটা বিশাল ইমানের দ্বারা উর্বর।” আপনারা জানেন তিনি কি উত্তর করেছিলেন? ভালো করে শুনে রাখুন হে আমার প্রানপ্রিয় ভাই ও বোনেরা। তিনি বলেছিলেন, “আমার সাথে এই মহিলার বিয়ে হয়েছিল ১৯ বছর ধরে এবং এই দীর্ঘ সময়ে আমি কখনও তাকে কোন সংগত কারন ছাড়া তাহাজ্জুদ সালাত ছেড়ে দিতে দেখি নি। আমি দেখিনি তাকে কখনও পরনিন্দা করতে, অযথা গল্প-গুজবে মত্ত হতে কিংবা মিথ্যা বলতে। যখনই আমি বাড়ি থেকে বের হয় বা ফিরে আসি সে নিজে দরজা খুলে দেয়, আমার জন্য দু’আ কর এবং আমাকে আপ্যায়ন করে। এবং সে যা কিছু করে সে সর্বোচ্চ ভালবাসা, যত্ন, সৌজন্য এবং মমত্বের পরিচয় রাখে।” লোকটি শেষ করলো এভাবে, “নিশ্চয়ই, ডাক্তার সাহেব, সে যে সমস্ত আদর্শ আচরন ও মমত্ববোধের সাথে আমার সাথে আচরন করে, আমি এমনকি তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকাতেও লজ্জাবোধ করি।” তাই আমি তাকে বললাম, “সত্যিই। ঠিক এমনটিই সে আপনার কাছ থেকে প্রাপ্য।”

এখানেই শেষ।

উবুন্টু ১০.০৪ ( ল্যুসিড লিংক্স )এ বহুভাষী কোরআন সফটওয়্যার Zekr.


উবুন্টু ১০.০৪ তে একটি বিশাল পরিবর্তন আনা হয়েছে উবুন্টু সফটওয়্যার সেন্টারে। অনেক নতুন সফটওয়্যার যোগ করা হয়েছে এতে।
আজ হঠাত্ করেই সফটওয়্যার সেন্টারে সার্চ দিলাম quran লিখে, দেখলাম Zekr সফটওয়্যারটি এড করা হয়েছে। যে সফটওয়্যারটি আমি উবুন্টু ৯.০৪ তে অনেক চেষ্টা করেও ডাউনলোড করতে পারিনি। আর উবুন্টু ১০.০৪ থেকে খুব সহজেই ডাউনলোড করে নিলাম ও পাশাপাশি এড করে নিলাম বাংলা ও ইতালিয়ান অনুবাদ।
কেউ যদি ডাউনলোড করতে চান তাহলে…
ডাউনলোড :
Applacations – Ubuntu Software Center তারপর সার্চ বক্সে লিখুন quran
undefined
ইনস্টল করুন এই সফটওয়্যার দুটি, ব্যস হয়ে গেল ডাউনলোড।
এখন সফটওয়্যারটি পাবেন : Applacatins – Islamic Software – Zekr


undefined


বাংলা অনুবাদ এড
আলহামদুলিল্লাহ, মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের কোরআনের বাংলা অনুবাদটি এই সফটওয়্যারের সাথে ব্যবহার করা যাবে।

এখান থেকে ডাউনলোড করুন বাংলা অনুবাদের জিপ ফাইলটি। সফটওয়্যারটি ওপেন করে তারপর Tools – Add- Translation গিয়ে বাংলা অনুবাদটি এড করুন।
আরবীর সাথে বাংলা অনুবাদকে ডিফন্ট করে রাখতে চাইলে View – Tranlation [bn_BD] মাওলানা মুহিউদ্দিন খান সিলেক্ট করুন।

কেউ যদি ইংরেজী অনুবাদটি ও আরবীর পাশাপাশি রাখতে চান তাহলে এখান থেকে ডাউনলোড করুন ইংরেজী অনুবাদের ফাইলটি।
আরবী বাংলা ও ইংরেজী ভাষা এক সাথে দেখতে চাইলে :
View – Tranlation- Configure Custom Tranlations এ গিয়ে Abdullah Yusufali – en_US ও মাওলানা মুহিউদ্দিন খান – bn_BD এড করুন।


undefined

বাংলা লেখা ছোট দেখালে : Tools – Options- View তে গিয়ে trans_fa_fontSize এর 11 কে 13 অথবা 14 করে দিন। তাহলেই বাংলা লেখা সুন্দর দেখতে পাবেন।
বি.দ্র : সফটওয়্যারটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও সফটওয়্যারটি উইন্ডোজের ডাউনলোড ও কনফিগারেশন এর নিয়ম কানুন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

ওয়ার্ডপ্রেস টিউটোরিয়াল-ছয়ঃ এডমিন প্যানেল পরিচিতি!

ওয়ার্ডপ্রেস এর আজকের টিউটোরিয়ালে স্বাগতম। গত পর্বগুলোতে আলোচনা ছিল ওয়ার্ডপ্রেসের শুরু থেকে কিভাবে আপনার লোকাল পিসিতে, রিমোট ওয়েব সার্ভারে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করবেন সেগুলোর চিত্রভিত্তিক ধারাবাহিক বর্ণনা। আশা করছি এত দিনে সেগুলো ভালভাবে রপ্ত করছেন। আজ থেকে শুরু হবে ওয়ার্ডপ্রেসের ড্যাশবোর্ডের/এডমিন প্যানেলের বিস্তারিত আলোচ
নাসহ আরও অনেক কিছুই। নতুন সেই ধারাবাহিকতায় আজকের আলোচনার বিষয় “ওয়ার্ডপ্রেসএডমিন প্যানেল পরিচিতি”। তো চলুন শুরু করি… ১. প্রথমেই আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে লগিন করুন। আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের লগিন পেজ ঠিকানা হবেঃ yoursitename.extesion/wp-login.php ২. লগিন এর পরে যে পেজটি পাবেন তা নিচের মতো… এটিই হল বাই ডিফল্ট ওয়ার্ডপ্রেস সাইট বা ব্লগের ড্যাশবোর্ড প্যানেল। এবার আসুন ধাপে ধাপে ড্যাশবোর্ড এর প্রতিটি সেকশনের সাথে পরিচিত হইঃ ৩. Dashboard: ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে লগিন করেই আপনি যে পেজটি পাবেন সেটিকে ড্যাশবোর্ড বলে। এই সেকশনে আপনি যা যা পাচ্ছেনঃ ক) Home: এই সেকশনের আওতায় আপনি আপনার সাইটে লগিন করেই যে পেজটি পাবেন তা নিচে দেখানো ড্যাশবোর্ড সেকশনের Home এ ক্লিক করেই আসতে পারবেন ড্যাশবর্ডের যেকোনো সেকশন থেকে। খ) Updates: এই মেন্যু থেকে আপনি আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে আপনার ইন্সটল করা যেকোনো প্লাগিং, থীম এবং ওয়ার্ডপ্রেস সিএমএস-টির নতুন কোন ভার্সন বের হলে তা জানতে এবং এই পেজ থেকে সরাসরি আপডেট করে নিতে পারবেন। ৪ Posts: ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে নতুন কোন লিখা দেওয়াকে পোস্ট বলে। এই সেকশনে আপনি যা [...]

হেডারে লোগো আপলোড করা ও ব্যানার অ্যাড উইজেট তৈরি করাঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-১২

সবাইকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে থিসিস থিম নিয়ে ১২তম পোস্ট আরম্ভ করতেছি। থিসিস থিম নিয়ে আমার আগের পোস্ট সমূহ দেখে নিতে পারেন- লেআউট ও কলামঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-এক নেভিগেশন মেনুঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-দু্ই নেভিগেশন মেনুঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-তিন সাইডবার ও উইজেটঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-চার ফুটারে তিনটি কলাম তৈরীঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-পাঁচ ফুটারে কলাম তৈরীঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-ছয় ফুটারে বিভাগ যুক্ত করাঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-সাত ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ ও ফুটারে অ্যাড উইজেট যোগ করাঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-আট পোস্টে লেখক তথ্য যোগ করাঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-নয় পোস্টে একই রকম পোষ্টের তথ্য যোগ করাঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-দশ কনটেন্টে পোস্ট স্লাইডার যুক্ত করাঃ ওয়ার্ডপ্রেস থিসিস থিম টিউটোরিয়াল পর্ব-এগার গত পর্বে আমি আপনাদের দেখিয়েছিলাম কেমন করে কন্টেন্টে পোস্ট স্লাইডার বসানো যাই।আজকে আমি আপনাদের দেখাব হেডারে কেমন করে লোগো বসানো যাই এবং হেডারে অ্যাড উইজেট যুক্ত করা যাই। হেডারে লোগো বসানো প্রথমে আপনার হেডারের লোগো নির্বাচন করুন। আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগে

সিএসই শিক্ষার্থীদের সি প্রোগ্রামিং ল্যাব সল্যুশন- প্রোগ্রামঃ-১

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল-সিএসই, চরম একটা সাবজেক্ট, যদি আপনি প্রোগ্রামিংটা ভাল বুঝতে পারেন। কিন্তু দুঃক্ষের বিষয় হল বেশিরভাগ সিএসই শিক্ষার্থী প্রোগ্রামিংকে ভয় পায়। কারণটা আমার জানা নাই। এই ভয়ের মাত্রা এতোই বেশি যে আমার ৯০% সহপাঠী ফাংশন ব্যবহার করে যোগের প্রোগ্রাম লিখতে পারে না, যেখানে আমাদের এখন ৩য় সেমিস্টার চলছে। তবে প্রোগ্রামিং আমার কাছে সহজই লাগে। তাই আমি আমার প্রোগ্রামিং অভিজ্ঞতা সবার সাথে “সহজ” ভাবে শেয়ার করতে চলে আসলাম। আমি এখানে সিএসই ১ম সেমিস্টারে সি প্রোগ্রামিং ল্যাব এ যে প্রোগ্রামগুলো করানো হয় সেগুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব। পর্যায়ক্রমে অন্য সেমিস্টারের প্রোগ্রামগুলো নিয়েও আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ। আমি এখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুসরন করব। তবে যদি কোন প্রোগ্রাম বাদ পরে যায় আপনারা মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন, আমি সেগুলো নিয়ে আলোচনা করার চেস্টা করব। শুরু করা যাক। আজকে আমরা ১ টি সহজ প্রযোগ্রাম নিয়ে আলোচনা করব, প্রোগ্রামঃ-১ Question: Write a program to find the area of a circle. (Use π as a symbolic constant). প্রশ্নঃ বৃত্তের ক্ষেত্রফল বের করার জন্য একটি দি প্রোগ্রাম লিখুন।( π এর মান সিম্বোলিক কন্সট্যান্ট হিসাবে ব্যবহার করতে হবে )

পেশা হিসেবে আউটসোর্সিং: ঘরে ফেরার এক বছর

বহুদিন আগে মানচুমাহারা কোথাও লিখেছিলেন- “অন্যের অধীনে চাকরী করার চাইতে নিজেকে একজন উদ্যোক্তা ভাবতেই পছন্দ করি।” এই কথাটাই কিভাবে কিভাবে ইন্সপায়ারেশন হয়ে দাড়িয়েছিল খেয়াল করিনি। যদিও তখন তাঁর সাথে ব্যক্তিগত কোন পরিচয় ছিল না। তিনি আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে ছিলেন এবং পেশায় একজন ফ্রিল্যান্সার এতটুকুই জানতাম। তবে আমিও যে ক্রমশ চাকরীজীবীর বদলে উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম এটা টের পেলাম অনেক পরে। যদিও আউটসোর্সিংয়ের বিষয়টা নিয়ে কখনোই তেমন কিছু ভাবিনি। তখন ভাবতাম একটা প্রতিষ্ঠান করার কথা। কিছু গ্রাফিক ডিজাইনার নিয়ে একটা ডিজাইন হাউজ করার ইচ্ছা ছিল লোকাল কাজগুলো করার জন্য। কিন্তু প্রথমত তখন একটা মাঝারি মানের প্রতিষ্ঠান করার মত পর্যাপ্ত টাকাও আমার ছিল না। একসময় এটার চাইতে আউটসোর্সিং অনেক সুবিধাজনক মনে হলো এবং সফল হতে পারলে নিজের এবং দেশের উভয়ের জন্যই লাভজনকও বটে। আর এর জন্য তেমন কোন পুঁজিরও দরকার নেই। আমার নিজের কাজের উপরে ৯ বছরের বেশী সময়ের অভিজ্ঞতা, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট কানেকশন সবই আমার ছিল। যদিও কম্পিউটারটা ছিল অনেক দুর্বল, এবং গ্রামীনফোনের স্লো ইন্টারনেট। তারপরও কাজ চালানো যায়। এখন প্রয়োজন সুযোগ এবং কিছুটা সময়।

যেভাবে শুরু:

প্রিন্টিং প্রেসে চাকরী করতাম। কাজের ফাঁকে অফিসে বসে এবং অফিস শেষে মেসে ফিরে বিভিন্ন ব্লগ ফোরামে আউটসোর্সিং বিষয়ে পড়াশুনা করেই কাটিয়ে দিতাম এবং একসময় মনে হলো এবারে একটু চেষ্টা করে দেখা যায়।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছিলাম ওডেস্ক থেকে। আমার ভাগ্যটা ভালই বলতে হবে, প্রথম বিডেই কাজ পেয়ে যাই এবং সেটা শেষ করতে না করতেই আরো কয়েকটা কাজ পেয়ে যাই। ফলে সাহস আরো একটু বেড়ে গিয়েছিল। এছাড়া ওডেস্কে যাদের কাজ করেছি তারা তাদের পরিচিত বা বন্ধুদেরকেও আমার রেফারেন্স দিতে লাগলো কাজের জন্য। মনে হলো এর পেছনে যদি ফুলটাইম সময় দেয়া যায় তাহলে আমার পক্ষেও সম্ভব। এই অল্প বয়সে জীবনে অনেকগুলো চাকরী করেছি এবং ছেড়েছি তাই বর্তমান প্রেসের চাকরীটা ছাড়ার কথা ভাবতে খারাপ লাগেনি। যদিও প্রথম দিকে একটু আশঙ্কায় ছিলাম আসলে এই পেশাটিতে আদৌ টিকে থাকতে পারবো কিনা বা কিছুদিন পর সব বাদ দিয়ে আবার চাকরী খুজতে বেরোতে হয় কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি কেননা ৫ সদস্যবিশিষ্ট পুরো পরিবারটিই আমার উপরে নির্ভরশীল এবং আমার এমন কোন পুঁজি বা অন্য কোন আয়ের উৎস ছিল না যা দিয়ে আমার আয় বন্ধ থাকলেও দু’মাস চলতে পারবো। আমার এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার লোকেরও খুব বেশী কমতি হয়নি। তবে সাহস জোগানোর মত কিছু সত্যিকারের বন্ধুও যে ছিল না তা নয়। ফলে স্বাধীনতা এবং পরিবারের কাছাকাছি থাকার ইচ্ছেটাকে কোনমতেই দমানো গেল না।

সিদ্ধান্ত এবং তার বাস্তবায়ন:

ফলে গত বছরের ৩০ এপ্রিল চাকরী ছেড়ে সারারাতের ট্রেন ভ্রমণ শেষে ১লা মে সকালে বাড়ি পৌছেছিলাম এবং ১ বছর বাড়িতে বসেই কাজ করলাম। বলতে পারি আগের থেকে অনেক ভাল আছি।
যদিও প্রথমদিকে খুবই অসুবিধা হচ্ছিল ইন্টারনেট, বিদ্যুত, সামাজিক, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় আউটসোর্সিংটা পেশা হিসেবে বিশেষ পরিচিত নয় এবং মফস্বল শহরগুলোতে কেউ যখন পেশা জিজ্ঞাসা করে তখন পেশাটিকে বুঝাতে ভালই বেগ পেতে হয়। এরপর ইন্টারনেট এবং বিদ্যুতের সমস্যা বুঝাতে গিয়ে আরো কিছু কিস্ট্রোক ব্যাবহার করার কারণ নেই। তবে বিদ্যুতের সমস্যা থেকে কিছুটা রেহাই পেতে ডেস্কটপের পরিবর্তে ল্যাপটপ ব্যবহার করছি। ইন্টারনেট কানেকশন হিসেবে ব্যবহার করছি বিটিসিএল এর ব্রডব্যান্ট কানেকশন। মাঝে মাঝে তার ছিড়ে যাওয়া ছাড়া এদের তেমন কোন সমস্যা নেই।

বর্তমান অবস্থা:

আমার ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুটা ওডেস্ক থেকে। ওখান থেকেই কিছু ভালমানুষের সাথে পরিচয় হয়েছিল যারা আমার নতুন ক্যারিয়ারটা দাড় করানোর জন্য যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। দু’টো প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সিনিয়র ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করছি ১ বছরের বেশী হয়ে গেল। এছাড়া পুরোনো ক্লায়েন্টগুলোতো আছেই সেইসাথে পুরোনো ক্লায়েন্টগুলোর রেফারেন্সে আরো কিছু নির্ভরযোগ্য ক্লায়েন্ট পেয়েছি ওডেস্কে এবং ওডেস্কের বাইরে। ফলে কাজের অভাব হয়নি। যদিও বাংলাদেশে পেপাল না থাকায় অনেক নতুন ক্লায়েন্টের কাজই এখনো ছেড়ে দিতে হয়। শোনা যাচ্ছে, শীঘ্রই পেপাল বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে। তখন এ সমস্যা থাকবে না আশা করছি।
প্রথমদিকে একাই কাজ করতাম এবং সময়ের অভাবে অনেক কাজ ফিরিয়ে দিতাম। একসময় বুঝতে পারলাম আমি যা করছি তা ঠিক না। কেননা আমি যখন কোন ক্লায়েন্টকে ফিরিয়ে দিচ্ছি তখন স্বাভাবিকভাবেই তিনি অন্য আরেকজনকে খুজে নেবেন এবং তার ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। ফলে প্রতিষ্ঠান করার ব্যাপারটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। হ্যা, আমরা একটা প্রতিষ্ঠান করেছি তবে সেটাও ভার্চুয়াল। ঘড়ি ধরে কারো অফিসে আসার দরকার নেই। যে যার বাড়িতে বা ধানক্ষেতে বসে কাজ করুক তাতেও কোন আপত্তি নেই। সময়মত কাজ হলেই হলো। দেশে-বিদেশে সবমিলিয়ে ১২ জনের একটা টিম আমরা একে অপরের কাজে সহযোগিতা করছি। ব্যাপারটা মন্দ না।
পেশাটিকে আমি পছন্দ করছি তার প্রধান কারণ হিসেবে বলতো আমাকে কোথাও খুটি গেড়ে বসে থাকতে হয় না। কোথাও যেতে চাইলে ল্যাপটপটা ঘাড়ে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লেই হলো। আমি যেখানে যাবো আমার অফিসেও সেখানে! আমি আমার পরিবারকে সময় দিতে পারছি, আমার বন্ধুদেরকে সময় দিতে পারছি আর কী চাই?
কৃতজ্ঞতা: মানচুমাহারা (যাকে এ পেশায় আসার পেছনে আমার আদর্শ মনে করি)