Manabota

Manabota

শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১২

শি ল্প ক লা /// লবণের শিল্পকর্ম!

খাদ্যে ব্যবহৃত এক ধরনের দানাদার এবং সাদাটে বর্ণের পদার্থ হচ্ছে লবণ। এর মূল উপাদান সোডিয়াম ক্লোরাইড। প্রাণীর জীবনধারণের জন্য এটি অপরিহার্য। কিন্তু অধিকাংশ স্থলজ উদ্ভিদের জন্যই তা বিষতুল্য। লবণের স্বাদকে মৌলিক স্বাদের একটি উপাদান বলে গণ্যও করা হয়। পৃথিবীর সর্বত্র এটি বিভিন্ন খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মানুষের খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের লবণ ব্যবহার করা হয়। যেমন, অপরিশোধিত লবণ, পরিশোধিত খাবার লবণ, আয়োডিনযুক্ত লবণ ইত্যাদি। সমুদ্রের পানি থেকে অথবা খনি থেকে সাধারণত লবণ আহরণ করা হয়। লবণ পানিগ্রাহী পদার্থ বলেই পরিচিত। তাই বর্ষাকালে এতে পানি জমতে থাকে। সমুদ্রের লোনা পানি ফুটিয়ে বাষ্পীভূত করে উৎপাদন করা হয় লবণ। এ ছাড়া লবণাক্ত কূপ অথবা লবণাক্ত হ্রদের পানি থেকেও লবণ আহরণ করা হয়ে থাকে। লোনা পানির পাশাপাশি পাথুরে খনি থেকেও লবণ সংগ্রহ করা হয়। 
খাদ্য উপাদান হিসেবে গ্রহণ করা হলেও বেশি লবণ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য যে ক্ষতিকর, এ তথ্য সর্বজন স্বীকৃত। চিকিৎসকরা সবসময়ই কাঁচা লবণ বর্জন এবং পরিমিত লবণ খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ [স্ট্রোক], হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ও হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশ্বের যেসব জনগোষ্ঠী লবণ কম খায়, তাদের আশি ভাগেরই উচ্চ রক্তচাপ থাকে না। অন্যদিকে যেসব এলাকার মানুষ লবণ বেশি খায়, সেখানকার প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় অর্ধেকই উচ্চ রক্তচাপে ভোগে। যেমন, জাপানে উচ্চ রক্তচাপ মহামারির মতো বিস্তার লাভ করেছে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও অস্টিওপোরোসিস, পাকস্থলীর ক্যান্সার; শারীরিক স্থূলতাও হতে পারে। অ্যাজমা থাকলে এর উপসর্গগুলো আরও বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশে খুব একটা গবেষণা না হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার [হু] হিসাবে প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি পাঁচ গ্রাম [এক চা-চামচ] বা তারও কম লবণ গ্রহণ করতে পারেন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এ পরিমাণ অবশ্যই আরও কম হতে হবে।
মানবদেহের জন্য অপরিহার্য এই লবণ দিয়ে যে শিল্পকর্ম করা সম্ভব, তা অনেকেরই অজানা। বিশ্বাসও করতে চাইবেন না কেউ। কিন্তু সম্প্রতি জাপানি শিল্পী মটোই ইয়ামামোটো লবণ দিয়ে তৈরি করেছেন বিচিত্র সব শিল্পকর্ম। তার তৈরি সব নকশা, মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি সবই লবণের তৈরি! সত্যিই এক অবিশ্বাস্য কারুকাজ। ১৯৯৬ সালে ব্রেইন ক্যান্সারে বোন মারা যাওয়ার পর প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলেন মটোই। বোন হারানোর শোক কাটাতে সাহায্য নেন পবিত্র লবণের। লবণ দিয়ে বানানো শুরু করেন বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম। জাপানিদের কাছে লবণ হচ্ছে শুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক। রীতি অনুযায়ী, শেষকৃত্যের পর মৃত ব্যক্তির স্বজনদের গায়ে লবণ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। তাদের ধারণা, এর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির আত্মা কোনো স্বজনকে কখনোই কষ্ট দেবে না। কোনো অশুভ ছায়াও পড়বে না স্বজন হারানো শোকার্ত ব্যক্তিদের ওপর।
সম্প্রতি জাপানি শিল্পী মটোই ইয়ামামোটোর লবণের তৈরি এই শিল্পকর্মগুলোর এক প্রদর্শনী হয়। প্রদর্শনী চলে জাপানের হাকওয়ান ওপেন-এয়ার মিউজিয়ামে। সেখানে প্রতিদিনই তিনি লবণ দিয়ে তৈরি করেন একের পর এক চোখ ধাঁধানো আকর্ষণীয় নকশা। কখনও লবণ দিয়ে বানিয়েছেন বড় বড় দেয়াল, কখনও লম্বা গম্বুজ, আবার কখনও বিশাল বিশাল চমৎকার নকশা। ছোট্ট তেলের কৌটায় লবণ ভরে তা দিয়ে এই কীর্তিগুলো তৈরি করেন তিনি। প্রতিটি প্রদর্শনী শেষে তিনি লবণগুলো সমুদ্রজলে বিসর্জন দেন। তার মতে, লবণগুলো সমুদ্রের বুকে ফেলে দেওয়ার অর্থ হলো, মানুষ ফিরে না এলেও প্রাকৃতিক নিয়মে এগুলো আবার লবণ হয়ে ফিরে আসে। আসবে বারবার। সত্যি কী বিচিত্র খেয়াল মানুষের! কী বিচিত্র চিন্তা-ভাবনা!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷