Manabota

Manabota

শনিবার, ২৬ মে, ২০১২

তোমার রাঙা ঠোঁট // সফিউল্লাহ আনসারী


আমার আকাশ চন্দ্র গ্রহন
কষ্ট দারুন রাত
তোমারটাতে জোৎস্না প্লাবন
সুখের জল প্রপাত 

করছি বরন মরনটারে
নীল আকাশের তলে
বিষাদ সময় বহন করে
ভাসছি নয়ন জলে 

রাখছে ঘিরে আধাঁর কালো
সারাটা ন ধরে
প্রতিাতে সময় আমার
তোমার স্মৃতি স্বরে 

নষ্ট আমি কষ্ট পেয়ে
স্পষ্ট এখন সবি
তোমার দেয়া আঘাত আমায়
করলো বিষাদ কবি 

দিন কাটেতো যেমন তেমন
রাত কাটেনা মোটে
আজো আমি সুখটা খুঁিজ
তোমার রাঁঙা ঠোঁটে 

সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর মমত্ববোধের প্রিয় কবি তোমায় লাখো সালাম // ”মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিক”


২৫মে,১১ জৈষ্ঠ আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী পালিত হল।দেশের বিভিন্ন স্থানে কবি’র জন্মবার্ষিকীকে ঘিরে ছিল নানা আয়োজন।ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির বাল্য ও কৈশোরের নানা স্মৃতি বিজরিত স্থান গুলোতেও চলছে বিভিন্ন আয়োজন।প্রতিবছর দরিরামপুর নজরুল মঞ্চে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান মালা আয়োজিত হলেও এবার হয়েছে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সে দিক দিয়ে নজরুল প্রেমীদের মাঝে একটা শুন্যতা বিরাজ করলেও নজরুলকে শ্রদ্ধা জানাতে ভুলে যায়নি এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা।চেষ্ঠা করেছেন নজরুলকে সকলের মাঝে যথাযথভাবে তুলে ধরতে।নজরুল আমাদের বিদ্রোহের কবি। তিনি কু-সংস্কার, অসুন্দর,অমানবিকতা,অবিচার,অসাম্য,শোষন,সংকীর্নতা,পরাধিনতা ও পশু শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন।সাম্য,স্বাধিনতা ও মাতৃত্ববোধে তিনি ছিলেন এক মূর্ত প্রতীক।নজরুল তাঁর সঙ্গীতে,কর্মজীবনে,কাব্যে অভেদ সুন্দর সাম্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্ঠা করেছেন।নজরুল ছিলেন এক অলৌকিক প্রতিভার অধিকারী,আকাশের মত বিশাল ও উদার ক্ষনজন্মা পুরুষ।তাঁর আবির্ভাব ধুমকেতুর মতই তীব্র,বেগময় ও বর্নোচ্ছটাময়।তিনি বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি ও সঙ্গীতকার।নজরুলকে আমরা একক একটি নতুন সত্বা ও নতুন শক্তিরুপে দেখতে পেয়েছি।মাত্র ২২বছরের সাহিত্য সাধনায় কবি রেখে গেছেন বিশ্ব সাহিত্য ভান্ডারে অমুল্র সম্পদ।জাতির দুর্ভাগ্য যে মাত্র ৪২ বছর বয়সে এই অসামান্য প্রতিভার অধিকারী কবি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারান।সাহিত্যের বৈচিত্রতায় একাধারে তিনি কবি,উপন্যাসিক,প্রবন্ধকার,গল্পকার,অনুবাদক, অন্যদিকে তিনি একজন সফল চলচ্চিত্রকার,নাট্যকার,অভিনেতা,পরিচালক,গীতিকার,সুরকার ও নতুন নতুন রাগ রাগিনীর ¯্রষ্ঠাও।পাশাপাশি তিনি সাংবাদিক,রাজনীতিক ও সৈনিক ছিলেন।অলৈাকিক প্রতিভার অধিকারী এ কবি প্রতিকুলতাকে জয় করেই পৃথিবীতে আসেন।জন্মের পর থেকে নানা প্রতিকুল ও বৈরিতার ভিতর দিয়েই জাতির কাছে পৌঁঁছুতে সক্ষম হন।সংকীর্ন মহল শুরু থেকেই তার পিছু ছিল।তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িতার ধুঁয়া তুলে সমালোচনা করা হয়েছে ভুষিত করা হয়েছে দেশদ্রোহীর খেতাবেও।একদিকে তাঁেক যেমন মৌলবাদী হিসেবে দেখানোর চেষ্ঠা করা হয়েছে অপর দিকে মোল্লা মুন্সীরাও ধর্মদ্রোহী আখ্যায়িত করতে দ্বিধা করেননি।নজরুলের সৃষ্ঠিশীল সাহিত্য ও সঙ্গীতে সার্বজনিন সকল সম্প্রদায়ের কথাই তুলে ধরা হয়েছে গভীর মমত্ববোধের সঙ্গে।তাই তিনি ছিলেন সার্বজনিন কবি।সুখের কথা হচ্ছে তিনি দু’পক্ষেরই তালি ও গালি পেয়ে  নিজের সার্বজনিন আসনকে পাকাপোক্ত করেছেন।নিজের স্বার্থ দেখার সুযোগ বা ফুরসৎ ছিলনা দারিদ্রতার অক্টোপাশে জড়িয়ে থাকা এ কবির।আজন্ম স্বাধিনতায় বিস্বাষী কবি সর্বদাই পাপ,পংকিলতা,জরাজির্নতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন।নিশ্চল,স্থবির ও বিরাগী জীবন ধারায় নজরুল এক নবজীবন চেতনার নাম।তিনি বলেছিলেন অসাম্য ও ভেদ জ্ঞান দুর করতে আমি এসেছি।নজরুলের গান ও রচনাবলী সর্বদাই জাগ্রত করে মননশীলতাকে।একথা বলতে দ্বিধা নেই যে,বর্তমান সময়ের অসুস্থ মানষিকতা,বিকৃত রুচিবোধ অর্থ ও বর্নহীন সাহিত্য এবং সঙ্গীতে নজরুলের সৃষ্টি কর্মই একমাত্র অবলম্বন।যাকে আঁকড়ে ধরেই নতুন শতাব্দির নব প্রজন্মের নিকট বেঁচে থাকবে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভান্ডার।নজরুলের জীবনধারা ছিল বৈচিত্রতায় ভরপুর।তার সৃষ্টি কর্মের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন সঙ্গীতাঙ্গনকে নিয়ে। সঙ্গীত জগতে নজরুলের বিচরন ক্ষেত্রটি ছিল বিশাল।নজরুলের রচিত গানের সংখ্যা ৩হাজারের মতো।বিভিন্ন ধরন ও আঙ্গিকের গান তিনি রচনা করেছেন।নজরলের সমৃদ্ধ সঙ্গীতের ভুবনে প্রবেশ করলে অমরা পরিচিত হতে পারি রাগ প্রধান গান,গজল,কাব্য সঙ্গীত,প্রেমগীত,ঋতু সঙ্গীত,হাসির গান,খেযাল,কোরাস,গনসঙ্গীত,শ্রমিক-কৃষকের গান,শ্র্যমা সঙ্গীত,হিন্দি ,লোকধারার গান সহ আরো অনেক বৈচিত্রের গানের সঙ্গে।নজরুলের গানে বাংলা ছাড়াও উর্দু,ফারসি,হিন্দি ইত্যাদি ভাষার আগমন ঘটেছে।লোক সঙ্গীতে স্বদেশী সুর,বাউল,ভাটিয়ালী,ভাওয়াইয়া,ঝুমুর,লোকসুর,লোকগান,গনসঙ্গীত,মেয়েলি গীত,ছন্দ পেটানো গান,ইত্যাদির সংমিশ্রন রয়েছে।এ ছাড়াও নজরুলের বিখ্যাত লেটো গানতো আছেই।গ্রামীন জীবন ধারার কবি লেটো গান রচনা ও লেটো দলে যোগদান করে সাহিত্য জীবনের এক গুরুত্বপুর্ন অধ্যায় অতিক্রম করেছেন।মক্তবে শিক্ষকতা,মাজারে খাদেম,মসজিদে ইমামতি এমনকি গ্রামের মোল্লাগিরিও বাদ রাখেননি জীবনজিবীকার প্রয়োজনে।পারিবারিক অসচ্ছলতার কারনে লেটো দলে গান ও নাটক রচনা করেও তাকে অর্থ উপার্জন করতে হয়েছে।তখনকার সময়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তার লেটো গান ব্যাপক আলোড়ন তুলে এখনো অনেক এলাকায় এর প্রচলন বিদ্যমান।লেটো দলে তার কয়েকটি পালার মধ্যে রাজপুত্র,আকবর বাদশা,মেঘনাবদ কাব্য,আজব বিয়ে,চাষার সঙ ইতাদি।নজরুলের ঝুমুর আঙ্গিকে করা গানে প্রেমিকাকে প্রকৃতির সঙ্গে মিলানোর চেষ্ঠা করেছেন এ ভাবে ’এই রাঙ্গামাটির পথে লো মাদল বাজে বাজে বাঁেশর বাশী .....মন লাগেনা কাজে লো......রইতে নারী ঘরে ওলো প্রান হলো উদাসিলো...।তিনি লোক সঙ্গীতেও প্রকৃত সুরের দিকে গুরুত্ব দিতেন।বিদ্রোহী কবির ভিতর বাউলেরও যে বসবাস ছিল তার গান থেকেই তা স্পষ্ঠ হয়ে উঠে যেমন’মোরা ভাই বাউল চারন মানিনা শাষন বারন জীবন মরন মোদের অনুচররে.....।ভাটিয়ালী সুরে নজরুল লিখেছেন ”এ কুল ভাঙ্গে ও কুল  গড়ে এই তো নদীর খেলা” অথবা কোন বিদেশের নাইয়া তুমি আইলা আমার গাঁও...লিখেছেন ’ও নাইয়া ধীরে চালাও তরনী.....।নজরুলের ’কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল করলে লোপাট রক্ত জমাট শিকল পূজোর পাষান .........গানটি কেবল ঔপনিবেশিক শক্তি বিরোধী আন্দোলনেই না প্রেরনা যুগিয়েছে আমাদের মহান মুক্তযোদ্ধেও।অলোক প্রতিভার চির বিদ্রোহের এ কবি আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন প্রতিটি অন্যায় অত্যাচার ও জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে।আসবেন অসাম্য জাতি ভেদ কুসংস্কারের বিরোদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ নিয়ে।কবি বেঁচে থাকবেন ’মম এক হাতে বাঁকা বাঁেশর বাঁশরী আর হাতে রন তুর্য’ নিয়ে আমাদের শোনাবেন শিকল ভাঙ্গার গান।১১৩তম জন্মবার্ষিকীতে কবি ভক্তদের এটাই প্রত্যাশা।বিন¤্র ভক্তি ও শ্রদ্ধা জানাই বাংলার গানে বুলবুলের এ আগমনী দিনে।তিনি বেঁচে থাকুন ’চির উন্নত মম শীর নিয়ে’ সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে।তিনি বলেছিলেন ’আমি চিরতরে দুরে চলে যাব তবু আমারে দেবনা ভুলিতে’আজকের ক্ষনটিতে নতুন প্রজন্মের একজন সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে আমরা কবিকে জানাতে চাই,হে চির বিদ্রোহের কবি আমরা তোমায় ভুলিনি এবং ভুলবওনা।তুমি বেঁেচ আছো এবং থাকবে।যেখানেই শোষন,অত্যাচার,নির্যাতন,নিপিড়ন,অজ্ঞতা,কু-সংস্কার,অসাম্যতা,জাতি,ধর্ম,বর্ন ভেদ সেখানেই তোমার বানীই এখনো একমাত্র চেতনা ও প্রেরনার উৎস।বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্ভারের এ কালজয়ী পুরুষ তোমাকে’জাতীয় কবি’ হিসেবে পেয়ে আমরাও গর্বিত ও উৎফুল্লিত।সৃস্ট্রিকর্তার প্রতি গভীর মমত্ববোধের প্রিয় কবি তোমায় লাখো সালাম।  


লেখকঃ
কন্ঠ শিল্পী,
বাংলাদেশ বেতার,
শিক্ষক,সাংবাদিক
ও সাংস্কৃতিক সংগঠক
ভালুকা,ময়মনসিংহ।

শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১২

দুখু মিয়া থেকে বিদ্রোহী নজরুল // এস,এম,আশিক


বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ - দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।  ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ।
রুটির দোকানের  দুখু মিয়া
কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল “দুখু মিয়া”।অভাব অনটন ও কষ্টের জীবনযাপনের জন্য তার নাম রাখা হয় দুখু মিয়া। তিনি বাল্য বয়সে স্থানীয় মক্তবে ‘মসজিদ পরিচালিত মুসলিমদের ধর্মীয় স্কুলে ‘পড়াশুনা শুরু করেন। ১৯০৮ সালে তার বাবা মারা যায়। তখন তার বয়স মাত্র নয় বছর। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তাঁর শিক্ষা বাধাগ্রস্থ হয়। মাত্র দশ বছর বয়সে তাঁকে নেমে যেতে হয় রুটি-রুজির সন্ধানে। এসময় তিনি মক্তবে ছাত্র পড়ানো শুরু করেন। একই সাথে হাজী পালোয়ানের কবরের সেবক এবং মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসাবে যুক্ত থাকেন। এভাবে তিনি ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়ের সাথে পরিচিত হন। মক্তব, মসজিদ ও মাজারের কাজে তিনি বেশি দিন ছিলেন না।বাল্য বয়সেই তিনি লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। একটি লেটো দলে যোগ দেন। তার চাচা কাজী ফজলে করিম চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটো দলের ওস্তাদ ছিলেন। আরবি, ফারসি ও উর্দূ ভাষায় তার দখল ছিল।  ১৯১০ সালে নজরুল লেটো দল ছেড়ে ছাত্র জীবনে ফিরে আসেন। তিনি প্রথমে রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন। আর্থিক সমস্যার কারণে বেশী দিন পড়াশোনা করতে পারেন নি। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর তাকে আবার রুটি-রুজির সন্ধানে যেতে হয়। প্রথমে যোগ দেন বাসুদেবের কবি দলে। একজন খ্রিস্টান রেলওয়ে গার্ডের খানসামা এবং সবশেষে আসানসোলের চা-রুটির দোকানে রুটি বানানোর কাজ নেন।
সৈনিক নজরুল
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত প্রদেশেরনওশেরায় যান। প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগ থেকে ১৯২০খ্রিস্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর। এই সময়ের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদারপর্যন্ত হয়েছিলেন। উক্ত রেজিমেন্টের পাঞ্জাবী মৌলবির কাছে তিনি ফারসি ভাষা শিখেন। এছাড়া সহসৈনিকদের সাথে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সঙ্গীতের চর্চা অব্যাহত রাখেন, আর গদ্য-পদ্যের চর্চাও চলতে থাকে একই সাথে। করাচি সেনানিবাসে বসে নজরুল যে রচনাগুলো সম্পন্ন করেন তার মধ্যে রয়েছে, বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী (প্রথম গদ্য রচনা), মুক্তি (প্রথম প্রকাশিত কবিতা); গল্প: হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে, কবিতা সমাধিইত্যাদি। এই করাচি সেনানিবাসে থাকা সত্ত্বেও তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাসী, ভারতবর্ষ, ভারতী, মানসী,মর্ম্মবাণী, সবুজপত্র, সওগাত এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা। এই সময় তার কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং ফারসি কবি হাফিজেরকিছু বই ছিল। এ সূত্রে বলা যায় নজরুলের সাহিত্য চর্চার হাতেখড়ি এই করাচি সেনানিবাসেই। সৈনিক থাকা অবস্থায় তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। এ সময় নজরুলের বাহিনীর ইরাক যাবার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় আর যাননি। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়। এর পর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন।
সাংবাদিক নজরুল
যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে নজরুল ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস শুরু করেন। তার সাথে থাকতেন এই সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা মুজফ্ফর আহমদ। এখান থেকেই তার সাহিত্য-সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু হয়। প্রথম দিকেই মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা প্রভৃতি পত্রিকায় তার কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস বাঁধন হারা এবং কবিতা বোধন, শাত-ইল-আরব, বাদল প্রাতের শরাব, আগমনী, খেয়া-পারের তরণী, কোরবানি, মোহরর্ম, ফাতেহা-ই-দোয়াজ্‌দম্। এই লেখাগুলো সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। এর প্রেক্ষিতে কবি ও সমালোচক মোহিতলাল মজুমদার মোসলেম ভারত পত্রিকায় তার খেয়া-পারের তরণী এবং বাদল প্রাতের শরাব কবিতা দুটির প্রশংসা করে একটি সমালোচনা প্রবন্ধ লিখেন। এ থেকেই দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সমালোচকদের সাথে নজরুলের ঘনিষ্ঠ পরিচয় শুরু হয়। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে কাজী মোতাহার হোসেন, মোজাম্মেল হক, কাজী আবদুল ওদুদ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, আফজালুল হক প্রমুখের সাথে পরিচয় হয়। তৎকালীন কলকাতার দুটি জনপ্রিয় সাহিত্যিক আসর গজেনদার আড্ডা এবং ভারতীয় আড্ডায় অংশগ্রহণের সুবাদে পরিচিত হন অতুলপ্রসাদ সেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, শিশির ভাদুড়ী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নির্মেলন্দু লাহিড়ী, ধুর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ওস্তাদ করমতুল্লা খাঁ প্রমুখের সাথে। ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি শান্তিনিকেতনে যেয়ে রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তখন থেকে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু পর্যন্ত তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। কাজী মোতাহার হোসেনের সাথে নজরুলের বিশেষ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।১৯২০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই ১২ তারিখে নবযুগ নামক একটি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনেরপ্রেক্ষাপটে প্রকাশিত এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন শেরে-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক। এই পত্রিকার মাধ্যমেই নজরুল নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেন। ঐ বছরই এই পত্রিকায় “মুহাজিরীন হত্যার জন্য দায়ী কে?” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেন যার জন্য পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং নজরুলের উপর পুলিশের নজরদারী শুরু হয়। যাই হোক সাংবাদিকতার মাধ্যমে তিনি তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পান। একইসাথে মুজফ্‌ফর আহমদের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পেয়েছিলেন। বিভিন্ন ছোটখাটো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কবিতা ও সঙ্গীতের চর্চাও চলছিল একাধারে। তখনও তিনি নিজে গান লিখে সুর দিতে শুরু করেননি। তবে ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গীতজ্ঞ মোহিনী সেনগুপ্তা তার কয়েকটি কবিতায় সুর দিয়ে স্বরলিপিসহ পত্রিকায় প্রকাশ করছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে: হয়তো তোমার পাব দেখা, ওরে এ কোন স্নেহ-সুরধুনী। সওগাত পত্রিকার ১৩২৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায় তার প্রথম গান প্রকাশিত হয়। গানটি ছিল: “বাজাও প্রভু বাজাও ঘন”
সাহিত্যকর্মে নজরুল
নজরুলের কবিতা১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের জন্ম দেন। এই দুটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ও ভাঙ্গার গান সঙ্গীত। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একই সময় রচিত আরেকটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে কামাল পাশা। এতে ভারতীয় মুসলিমদের খিলাফত আন্দোলনের অসারতা সম্বন্ধে নজরুলে দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন আন্তর্জাতিক ইতিহাস-চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কবিতা-সংকলন অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতায় একটি নতুনত্ব সৃষ্টিতে সমর্থ হয়, এর মাধ্যমেই বাংলা কাব্যের জগতে পালাবদল ঘটে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরপর এর কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: “প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, শাত-ইল্‌-আরব, বিদ্রোহী, কামাল পাশা” ইত্যাদি।
গদ্য রচনা, গল্প ও উপন্যাসনজরুলের প্রথম গদ্য রচনা ছিল “বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী”। ১৯১৯ সালের মে মাসে এটি সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সৈনিক থাকা অবস্থায় করাচি সেনানিবাসে বসে এটি রচনা করেছিলেন। এখান থেকেই মূলত তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটেছিল। এখানে বসেই বেশ কয়েকটি গল্প লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে: “হেনা, ব্যাথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে”। ১৯২২ সালে নজরুলের একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয় যার নাম ব্যথার দান। এছাড়া একই বছর প্রবন্ধ-সংকলন যুগবাণী প্রকাশিত হয়।
নজরুল সঙ্গীতনজরুলগীতি বা নজরুল সঙ্গীত বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান কবি ও সংগীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলাম লিখিত গান। তাঁর সীমিত কর্মজীবনে তিনি ৩,০০০-এরও বেশি গান রচনা করেছেন। পৃথিবীর কোনো ভাষায় একক হাতে এত বেশি সংখ্যক গান রচনার উদাহরণ নেই। এসকল গানের বড় একটি অংশ তাঁরই সুরারোপিত।

বিদ্রোহী নজরুল
তখন দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন বিপুল উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। নজরুল কুমিল্লা থেকে কিছুদিনের জন্য দৌলতপুরে আলী আকবর খানের বাড়িতে থেকে আবার কুমিল্লা ফিরে যান ১৯ জুনে। এখানে যতদিন ছিলেন ততদিনে তিনি পরিণত হন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীতে। তাঁর মূল কাজ ছিল শোভাযাত্রা ও সভায় যোগ দিয়ে গান গাওয়া। তখনকার সময়ে তার রচিত ও সুরারোপিত গানগুলির মধ্যে রয়েছে “এ কোন পাগল পথিক ছুটে এলো বন্দিনী মার আঙ্গিনায়, আজি রক্ত-নিশি ভোরে/ একি এ শুনি ওরে/ মুক্তি-কোলাহল বন্দী-শৃঙ্খলে” প্রভৃতি। এখানে ১৭ দিন থেকে তিনি স্থান পরিবর্তন করেছিলেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে আবার কুমিল্লায় ফিরে যান। ২১ নভেম্বর ছিল সমগ্র ভারতব্যাপী হরতাল। এ উপলক্ষে নজরুল আবার পথে নেমে আসেন; অসহযোগ মিছিলের সাথে শহর প্রদক্ষিণ করেন আর গান করেন, “ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও! ফিরে চাও ওগো পুরবাসী”। নজরুলের এ সময়কার কবিতা, গান ও প্রবন্ধের মধ্যে বিদ্রোহের ভাব প্রকাশিত হয়েছে। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে বিদ্রোহী নামক কবিতাটি।
কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। তাঁর রচিত “চল চল চল, ঊর্ধগগনে বাজে মাদল” বাংলাদেশের রণসংগীত হিসাবে গৃহীত। বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে তার বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে তাকে এই উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
১৯৭৬ সালে নজরুলের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে শুরু করে। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০১২

প্রতিটি দিনই নজরুলের জন্মদিন / জাহীদ রেজা নূর | তারিখ: ২৩-০৫-২০১২

তুমি বলবে, নজরুল তো বিদ্রোহের কবি, আমি বলব প্রেমের।
তুমি আবৃত্তি করবে ‘সাম্যবাদী’, আমি গাইব ‘এত জল ও কাজল চোখে’।
তুমি আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে ‘রাজবন্দির জবানবন্দী’। আমি তোমাকে শোনাব ‘সখি পাতিসনে শিলাতলে পদ্মপাতা’। 
আমরা দুই মেরুর দুজন মানুষ একসময় বিতর্ক থেকে বেরিয়ে এসে একসঙ্গে পড়ব ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতাখানি। একসময় আমরা আবিষ্কার করব, আমরা দুজন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই কথা বলছি। নজরুলের সঙ্গে আরেকটু সখ্য হলে দেখব, একই বৃন্তে যে দুটি কুসুম ফুটিয়েছেন তিনি, তা বিদ্রোহ আর প্রেমের গলিত-মিলিত স্রোতোধারা। বাঁধনহারা বুঝি একেই বলে! 
নজরুল আসলে গতির অন্য নাম। সময়কে হাতের মুঠোয় রেখে তাল-ছন্দ-লয় নিয়ে বিশ্ব কাঁপিয়েছেন। সৃষ্টিসুখের কী উল্লাস তাঁর! আর আবেগের মূর্ছনায় ভেসে গেল সব। তুমি আর আমি একমত হব, কবিতায়-গানে তিনি মুসলমান জাগরণের কথা বলেছেন যেমন, তেমনই ভারতীয় লোককথা, পুরাণেরও আশ্রয় নিয়েছেন। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় তিনি ‘জাহান্নামের’ আগুনে বসে পুষ্পের হাসি হাসছেন, সেখানেই ‘বিদ্রোহী’ ভৃগু হয়ে ভগবানের বুকে এঁকে দিচ্ছেন পদচিহ্ন। আমরা আরও বিস্মিত হব এই দেখে যে, নজরুল লিখছেন ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এল রে দুনিয়ায়’। 
এখানে বিস্মিত হওয়ার কী আছে? প্রশ্ন করবে তুমি।
আমি বলব, ভেবে দেখো, তিনি দোজাহান বলছেন না, বলছেন ত্রিভুবন। এভাবেই তিনি খেলছেন ‘এ বিশ্ব লয়ে’।

২.
১৯৭৩ সালের একদিন। ধানমন্ডির কবিভবনে গিয়েছিলাম আমরা। একেবারে শিশুর মতো একজন মানুষ বসে আছেন খাটে। হারমোনিয়াম নিয়ে শিল্পী ফিরোজা বেগম গান করছেন। কবির মাথা একটু একটু দুলছে। আমরা কতিপয় শিশু তন্ময় হয়ে দেখছিলাম আমাদের জাতীয় কবিকে। আমাদেরই তিন বছুরে একজনের মাথায় হাত রেখেছিলেন দেখে আমরা আনন্দ পেয়েছিলাম খুব। পরদিন স্কুলে গিয়ে সেই বিশাল অর্জন ভাগাভাগি করে নিয়েছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে।
সেই আমরাই ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট বেতারে শুনতে পেলাম, কবি আর নেই। ঢাকা শহরের মানুষ তখন ছুটছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে। সেই মানুষের ঢলে স্রোতের মতোই ভেসে চলি আমরা কয়েকজন। একনজর দেখা হয় নজরুলকে। তখনো বুঝিনি, এখন বুঝি, এই ইতিহাসের একটু অংশের অংশীদার হয়েছি আমরা। 

৩.
তুমি বলবে, নজরুলের জন্মদিনে মৃত্যুদিনের কথা কেন?
আমি বলব, নজরুলের কি মৃত্যু হয় কখনো? প্রতিদিনই নজরুলের জন্মদিন। প্রতিটি দিনই নজরুলকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া!

যৌবনের গান / কাজী নজরুল ইসলাম

২৫ মে কাজীনজরুল ইসলামের জন্মদিন। দিবসটি উপলক্ষে কবির ‘যৌবনের গান’-এর অংশবিশেষ পাঠক বন্ধুদের জন্য তুলে দেওয়া হলো। নজরুল এখনো প্রাসঙ্গিক, নজরুল এখনো আমাদের সময়ের দাবি পূরণ করছেন।

বার্ধক্য তাহাই—যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে, বৃদ্ধ তাহারাই—যাহারা মায়াচ্ছন্ন নব মানবের অভিনব জয় যাত্রার শুধু বোঝা নয়, বিঘ্ন; শতাব্দীর নব যাত্রীর চলার ছন্দে ছন্দ মিলাইয়া যাহারা কুচকাওয়াজ করিতে জানে না, পারে না; যাহারা জীব হইয়াও জড়; যাহারা অটল সংস্কারের পাষাণস্তূপ আঁকড়িয়া পড়িয়া আছে। বৃদ্ধ তাহারাই যাহারা নব অরুণোদয় দেখিয়া নিদ্রাভঙ্গের ভয়ে দ্বার রুদ্ধ করিয়া পড়িয়া থাকে। আলোক-পিয়াসী প্রাণ চঞ্চল শিশুদের কল কোলাহলে যাহারা বিরক্ত হইয়া অভিসম্পাত করিতে থাকে, জীর্ণ পুঁতি চাপা পড়িয়া যাহাদের নাভিশ্বাস বহিতেছে, অতি জ্ঞানের অগ্নিমান্দ্যে যাহারা আজ কঙ্কালসার—বৃদ্ধ তাহারাই। ইহাদের ধর্মই বার্ধক্য। বার্ধককে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। বহু যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি। আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি যাঁহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন। তরুণ নামের জয়-মুকুট শুধু তাহারই যাহার শক্তি অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নের মার্তণ্ডপ্রায়, বিপুল যাহার আশা, ক্লান্তিহীন যাহার উৎসাহ, বিরাট যাহার ঔদার্য, অফুরন্ত যাহার প্রাণ, অটল যাহার সাধনা, মৃত্যু যাহার মুঠিতলে। তারুণ্য দেখিয়াছি আরবের বেদুইনদের মাঝে, তারুণ্য দেখিয়াছি মহাসমরে সৈনিকের মুখে, কালাপাহাড়ের অসিতে, কামাল-করিম-মুসোলিনি-সানইয়াৎ লেনিনের শক্তিতে। যৌবন দেখিয়াছি তাহাদের মাঝে—যাহারা বৈমানিকরূপে অনন্ত আকাশের সীমা খুঁজিতে গিয়া প্রাণ হারায়, আবিষ্কারকরূপে নব-পৃথিবীর সন্ধানে গিয়া আর ফিরে না, গৌরীশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষদেশ অধিকার করিতে গিয়া যাহারা তুষার-ঢাকা পড়ে, অতল সমুদ্রের নীল মঞ্জুষার মণি আহরণ করিতে গিয়া সলিলসমাধি লাভ করে, মঙ্গলগ্রহে, চন্দ্রলোকে যাইবার পথ আবিষ্কার করিতে গিয়া নিরুদ্দেশ হইয়া যায়। পবন-গতিকে পশ্চাতে ফেলিয়া যাহারা উড়িয়া যাইতে চায়, নব নব গ্রহ-নক্ষত্রের সন্ধান করিতে করিতে যাহাদের নয়ন-মণি নিভিয়া যায়—যৌবন দেখিয়াছি সেই দুরন্তদের মাঝে। যৌবনের মাতৃরূপ দেখিয়াছি—শব বহন করিয়া যখন সে যায় শ্মশানঘাটে, গোরস্থানে, অনাহারে থাকিয়া যখন সে অন্ন পরিবেশন করে দুর্ভিক্ষ বন্যা-পীড়িতদের মুখে, বন্ধুহীন রোগীর শয্যাপার্শ্বে যখন সে রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া পরিচর্যা করে, যখন সে পথে পথে গান গাহিয়া ভিখারী সাজিয়া দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য ভিক্ষা করে, যখন দুর্বলের পাশে বল হইয়া দাঁড়ায়, হতাশের বুকে আশা জাগায়।
ইহাই যৌবন, এই ধর্ম যাহাদের তাহারাই তরুণ। তাহাদের দেশ নাই, জাতি নাই, অন্য ধর্ম নাই। দেশ-কাল-জাতি-ধর্মের সীমার ঊর্ধ্বে ইহাদের সেনানিবাস। আজ আমরা—মুসলিম তরুণেরা— যেন অকুণ্ঠিত চিত্তে মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারি—ধর্ম আমাদের ইসলাম, কিন্তু প্রাণের ধর্ম আমাদের তারুণ্য, যৌবন। আমরা সকল দেশের, সকল জাতির, সকল ধর্মের, সকল কালের। আমরা মুরিদ যৌবনের। এই জাতি-ধর্ম-কালকে অতিক্রম করিতে পারিয়াছে যাঁহাদের যৌবন, তাঁহারাই আজ মহামানব, মহাত্মা, মহাবীর। তাহাদিগকে সকল দেশের সকল ধর্মের সকল লোক সমান শ্রদ্ধা করে।
পথ-পার্শ্বের ধর্ম-অট্টালিকা আজ পড় পড় হইয়াছে, তাহাকে ভাঙিয়া ফেলিয়া দেওয়াই আমাদের ধর্ম, ঐ জীর্ণ অট্টালিকা চাপা পড়িয়া বহু মানবের মৃত্যুর কারণ হইতে পারে। যে-ঘর আমাদের আশ্রয় দান করিয়াছে, তাহা যদি সংস্কারাতীত হইয়া আমাদেরই মাথায় পড়িবার উপক্রম করে, তাহাকে ভাঙিয়া নতুন করিয়া গড়িবার দুঃসাহস আছে একা তরুণেরই। খোদার দেওয়া এই পৃথিবীর নিয়ামত হইতে যে নিজেকে বঞ্চিত রাখিল, সে যত মোনাজাতই করুক, খোদা তাহা কবুল করিবেন না। খোদা হাত দিয়াছেন বেহেশত ও বেহেশতি চিজ অর্জন করিয়া লইবার জন্য, ভিখারীর মতো হাত তুলিয়া ভিক্ষা করিবার জন্য নয়। আমাদের পৃথিবী আমরা আমাদের মনের মতো করিয়া গড়িয়া লইব। ইহাই হউক তরুণের সাধনা।

রবিবার, ২০ মে, ২০১২

আবুল বাশার শেখ এর তিনটি কবিতা-


 দয়ার সাগর


 দয়াময় আমি গুনাহ্গার
 ক্ষমা কর তুমি মোরে,
 সারা জীবন চলতে চাই
 তোমারই পথ ধরে।
 চলার পথে যা করি
 সবই যেন হয় তোমার,
 দিন কায়েমের তরে তুমি
 জীবনটা নাও আমার।
 তোমার পথের শত্রু যারা
 পাবেনা ক্ষমা কভু,
 আল্লাহ তুমি দয়ার সাগর
 সারা জাহানের প্রভু।
  
 তাং- ২০/ ০৫/ ১২ ইং

জনমত


 জিনিস পত্রের দাম
 প্রতি দিনই বাড়ছে,
 ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট
 কল কাঠিটা নাড়ছে।
 গণতন্ত্র লুণ্ঠিত
 বিপন্ন মানবতা,
 জোর যার মুল্ল ুক তার
 এ নীতি যথা-তথা।
 নিম্ন আয়ের মানুষ যারা
 কষ্টে কাটে তাদের দিন,
 তাদের কথা কেউ ভাবেনা
 বক্তিতাতে হয় মলিন।
 উলট পালট কথা ছেড়ে
 দেশের কথা ভাবেন,
 সত্যিকারের উন্নয়নে 
 জনগণকে পাবেন।
   
 তাং- ২০/ ০৫ / ১২ ইং


নীতি কথার পরাজয়
 
 রক্ষক যদি ভক্ষক হন
 কেমন করে চলবে দেশ,
 স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা
 এক নিমিষেই হবে শেষ।
 ক্ষমতা আসে যার হাতে
 সেই তো করে লুটতরাজ,
 তারাই ফের প্রতিশ্রুতিতে
 গড়তে চায় এই সমাজ।
 দেশের ভাল ক’জন চায়
 সু-নাগরিক নাম ধারী,
 ক্ষমতা পেলে হাতের মুঠে
 করতে পারে পুকুর চুরি।
 সত্য কথা বলতে গেলে
 দেশদ্রোহী মামলা হয়,
 নীতি কথা পাথর চাপায়
 বরণ করে পরাজয়।

রাত জাগা / জীবন সহোদর- ,আবুল বাশার শেখ


রাত জাগা 
  

 সেলফোন খোলা রেখ

 রাত বারটায়,
 কথা হবে নিরিবিলি
 মন যদি চায়।
 ভাল লাগা ভালবাসা
 হবে লেনা-দেনা,
 মনের লোকানো কথা
 তাও হবে জানা।
 না হয় দিও তুমি 
 দু’টি মিস্ডকল,
 মিষ্টি গানের সুরে
 পাবে তার ফল।
 ডাহুক পাখির মত
 থাকবো জেগে,
 গুপ্ত প্রেমের দেখা
 পাবে যে ত্যাগে।
  অপেক্ষা শুরু হলো
 ভাবনা তোমার,
 ভেবে দেখ এ জীবনে
 হবে কি আমার!
 তাং- ১৭ / ০৫ / ২০১২ ইং

 জীবন সহোদর


 বাস্তবতার একটি সিঁড়ি খুব প্রয়োজন

 স্থাপত্য শৈলির রূপরেখা অনন্য যার বৈশিষ্ঠ্য,
 যা স্থাপিত হবে মনের গহীনে।
 ভাগ করা যায় কি জীবন!
 প্রতারণা যখন চৌদিক ঘিরে রাখে
 তখন জীবনে নেমে আসে ঘন অন্ধকার। 
 বুঝেনা যখন কেউ জীবনের সরলতা 
 জীবন সহোদর সীমানা পেরিয়ে চলন্ত ট্রেনের
 মত বেঈমানী করে। 
 অবুঝ বালক সেঁজে বসে থাকি।
  তাং- ১৭/ ০৫ / ১২ ইং

এ কোন্ দেশ / আবুল বাশার শেখ


এ কোন্ দেশ //
 
 স্বাধীন না কি আমরা সবাই স্বাধীন
 ভেবে দেখেন একটি বার
 কেমন করে যাচ্ছে দিন।
 ঘর থেকে বের হতে গেলেই ভাবনা হাজার
 কেমন করে অফিস যাবো করবো নিত্য বাজার!
 মাথার উপর অস্ত্র ঠেকায় দিন দুপুরে
 ভাল মন্দ যায়না চেনা দেখে উপরে।
 তার উপরে হতে হয় যদি অপহরণ
 জানা যাবে না কোথা যে কার হবে মরণ।
 চলার পথে সকল সময় ভয় থাকে যে মনে
 স্বাধীনতা কোথায় পাব জিজ্ঞাসী জনে জনে।
 পাইনা খোঁজে সঠিক উত্তর মনগড়া সব মত
 স্বাধীনতা পাব কোথায় জানতে চাই অভিমত।

তাহলে আমি কে ? // সোহেল চৌধুরী


আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, সবাই আমাকে বলত, "তুই একটা জ্বিন"
সবাইতো যেমন তেমন- আমার বাবাও একদিন রেগে গিয়ে বললেন, "তুই একটা শয়তানের বাচ্চা"
ভাবলাম, শয়তান+বাচ্চা= শয়তানের বাচ্চা
অর্থাত? আমার বাবা একটা শয়তান !
যেহেতু ছোট ছিলাম আর বুদ্ধি ছিল তীক্ষ্ণ
বাবাকে প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা বাবা, শয়তান কি ম্যাসক্যুলিন - নাকি ফ্যামিনিন ?
বললেন, "চুপ ! বান্দরের বাচ্চা !!! "
যাক, বাবার বংশধারা নিয়ে ভাবতে আর ইচ্ছে হলোনা !
একটু বড় হলে, মায়ের জোড়াজোরিতে ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হয়েছি
একদিন টিচার আমার পিঠ চাপড়ে বললেন "ইউ আর জিনিয়াস"
শব্দটি বহু শুনেছি, কিন্তু কি যেন একটা যোগ হলো (?)
মানে, জীন+ইয়াস= জিনিয়াস
তার মানে কি? আমি কী ইয়াস নামক জ্বিন ? নাকি ইয়াস মানে জ্বীনের বিপরীতটা ??
সমস্যায় পড়লাম, দ্বিধায় পড়লাম
তাহলে আমি কে ?
আমি একটা জ্বিন

আমি বিজয় দেখিনি তবে অনেক দেখেছি !!!! by Sohail Choudhury



 
বিজয়ের দিনটিতে ছোট ছিলাম; তাই তেমন কিছুই সেদিন দেখিনি
স্বাধীন এ দেশে নিজামীর গাড়ীতে স্বাধীনতার সেই পতাকা উড়তে দেখেছি
 
যুদ্ধকালীন যুদ্ধরত মায়াকে আমি দেখিনি
স্বাধীন এ দেশে মায়া-বাহিনীর তান্ডবলীলা দেখেছি
 
করাচীতে বসে সাকা বাহিনীর ষড়যন্ত্রের কথা শুনেছি
স্বাধীন এ দেশে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হতে তাকে দেখেছি
 
যুদ্ধকালীন বাঘাকাদেরের বীরগাঁথা আমি শুনেছি
স্বাধীন এ দেশে সে বাঘের গলায় গামছা ঝুলতে দেখেছি
 
কোথা ছিল এরশাদ সেই দিনগুলোতে, কারো কাছে কভূ শুনিনি
প্রজাতন্ত্রের রাজার আসনে ন'টি বছর তাকে দেখেছি
 
মহান মুজিবের স্বাধীনতা বিরোধীকে ক্ষমার কথা শুনেছি
তাঁরই নাতনীর শ্বশুর হয়েছে, নিজেই আমি দেখেছি
 
আমি বিজয় দেখিনি : তবে অনেক দেখেছি !!!!
 
Sohail  Choudhury
Mobile: +880-1191350884
 

শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১২

শি ল্প ক লা /// লবণের শিল্পকর্ম!

খাদ্যে ব্যবহৃত এক ধরনের দানাদার এবং সাদাটে বর্ণের পদার্থ হচ্ছে লবণ। এর মূল উপাদান সোডিয়াম ক্লোরাইড। প্রাণীর জীবনধারণের জন্য এটি অপরিহার্য। কিন্তু অধিকাংশ স্থলজ উদ্ভিদের জন্যই তা বিষতুল্য। লবণের স্বাদকে মৌলিক স্বাদের একটি উপাদান বলে গণ্যও করা হয়। পৃথিবীর সর্বত্র এটি বিভিন্ন খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মানুষের খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের লবণ ব্যবহার করা হয়। যেমন, অপরিশোধিত লবণ, পরিশোধিত খাবার লবণ, আয়োডিনযুক্ত লবণ ইত্যাদি। সমুদ্রের পানি থেকে অথবা খনি থেকে সাধারণত লবণ আহরণ করা হয়। লবণ পানিগ্রাহী পদার্থ বলেই পরিচিত। তাই বর্ষাকালে এতে পানি জমতে থাকে। সমুদ্রের লোনা পানি ফুটিয়ে বাষ্পীভূত করে উৎপাদন করা হয় লবণ। এ ছাড়া লবণাক্ত কূপ অথবা লবণাক্ত হ্রদের পানি থেকেও লবণ আহরণ করা হয়ে থাকে। লোনা পানির পাশাপাশি পাথুরে খনি থেকেও লবণ সংগ্রহ করা হয়। 
খাদ্য উপাদান হিসেবে গ্রহণ করা হলেও বেশি লবণ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য যে ক্ষতিকর, এ তথ্য সর্বজন স্বীকৃত। চিকিৎসকরা সবসময়ই কাঁচা লবণ বর্জন এবং পরিমিত লবণ খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ [স্ট্রোক], হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ও হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশ্বের যেসব জনগোষ্ঠী লবণ কম খায়, তাদের আশি ভাগেরই উচ্চ রক্তচাপ থাকে না। অন্যদিকে যেসব এলাকার মানুষ লবণ বেশি খায়, সেখানকার প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় অর্ধেকই উচ্চ রক্তচাপে ভোগে। যেমন, জাপানে উচ্চ রক্তচাপ মহামারির মতো বিস্তার লাভ করেছে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও অস্টিওপোরোসিস, পাকস্থলীর ক্যান্সার; শারীরিক স্থূলতাও হতে পারে। অ্যাজমা থাকলে এর উপসর্গগুলো আরও বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশে খুব একটা গবেষণা না হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার [হু] হিসাবে প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি পাঁচ গ্রাম [এক চা-চামচ] বা তারও কম লবণ গ্রহণ করতে পারেন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এ পরিমাণ অবশ্যই আরও কম হতে হবে।
মানবদেহের জন্য অপরিহার্য এই লবণ দিয়ে যে শিল্পকর্ম করা সম্ভব, তা অনেকেরই অজানা। বিশ্বাসও করতে চাইবেন না কেউ। কিন্তু সম্প্রতি জাপানি শিল্পী মটোই ইয়ামামোটো লবণ দিয়ে তৈরি করেছেন বিচিত্র সব শিল্পকর্ম। তার তৈরি সব নকশা, মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি সবই লবণের তৈরি! সত্যিই এক অবিশ্বাস্য কারুকাজ। ১৯৯৬ সালে ব্রেইন ক্যান্সারে বোন মারা যাওয়ার পর প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলেন মটোই। বোন হারানোর শোক কাটাতে সাহায্য নেন পবিত্র লবণের। লবণ দিয়ে বানানো শুরু করেন বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম। জাপানিদের কাছে লবণ হচ্ছে শুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক। রীতি অনুযায়ী, শেষকৃত্যের পর মৃত ব্যক্তির স্বজনদের গায়ে লবণ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। তাদের ধারণা, এর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির আত্মা কোনো স্বজনকে কখনোই কষ্ট দেবে না। কোনো অশুভ ছায়াও পড়বে না স্বজন হারানো শোকার্ত ব্যক্তিদের ওপর।
সম্প্রতি জাপানি শিল্পী মটোই ইয়ামামোটোর লবণের তৈরি এই শিল্পকর্মগুলোর এক প্রদর্শনী হয়। প্রদর্শনী চলে জাপানের হাকওয়ান ওপেন-এয়ার মিউজিয়ামে। সেখানে প্রতিদিনই তিনি লবণ দিয়ে তৈরি করেন একের পর এক চোখ ধাঁধানো আকর্ষণীয় নকশা। কখনও লবণ দিয়ে বানিয়েছেন বড় বড় দেয়াল, কখনও লম্বা গম্বুজ, আবার কখনও বিশাল বিশাল চমৎকার নকশা। ছোট্ট তেলের কৌটায় লবণ ভরে তা দিয়ে এই কীর্তিগুলো তৈরি করেন তিনি। প্রতিটি প্রদর্শনী শেষে তিনি লবণগুলো সমুদ্রজলে বিসর্জন দেন। তার মতে, লবণগুলো সমুদ্রের বুকে ফেলে দেওয়ার অর্থ হলো, মানুষ ফিরে না এলেও প্রাকৃতিক নিয়মে এগুলো আবার লবণ হয়ে ফিরে আসে। আসবে বারবার। সত্যি কী বিচিত্র খেয়াল মানুষের! কী বিচিত্র চিন্তা-ভাবনা!

লেবু-মধু পানীয় ওজন কমাতে সাহায্য করে / ডা. মালিহা শিফা


ওজন কমাতে আমরা যেন অনেকে একটু বেশিই সচেতন। তবে ওজন বাড়ানোর সময় এ বিষয়টি খুব কম লোকেরই খেয়াল থাকে। তাই মনে রাখা ভালো ওজন কমানোর চেয়ে ওজন না বাড়ানোই ভালো।
ওজন কমাতে আমরা চা, ওজন কমানোর ওষুধ কিংবা ব্যায়ামও করে থাকি। তবে চা এবং ওজন কমানোর ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
তবে ওজন কমাতে প্রাকৃতিক উপাদান মধু ও লেবু কার্যকরী। তা পরীক্ষিত এবং সারা বিশ্বে সমাদৃত ও স্বীকৃত। ওজন কমাতে দু’টি প্রাকৃতিক উপাদান লেবু ও মধুর পানীয় সম্পর্কে অনেকেই জানেন। ওজন কমানো ছাড়াও লেবু ও মধুর অনেক গুণাগুণ আছে।
মধু কীভাবে ওজন কমায় :

মধুতে যদিও চিনি থাকে, কিন্তু এতে ভিটামিন ও মিনারেল থাকার কারণে এটি সাধারণ চিনির মতো ওজন না বাড়িয়ে বরং কমায়। কারণ সাধারণ চিনি হজম করতে আমাদের শরীর নিজের থেকে ভিটামিন ও মিনারেল খরচ করে, ফলে এসব পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। এসব উপাদান ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কমাতে বা ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে যখন আমরা বেশি চিনি খাই, তখন অধিক ক্যালরি শরীরে জমা ছাড়াও এসব পুষ্টি উপাদানের চিনি হজম করতে অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। তাই ওজন বাড়াতে পারে।
কিন্তু মধুতে এসব উপাদান থাকার ফলে এগুলো হজমে সহায়ক এবং ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কমায়। তাই এই পানীয় ওজন কমায়।
তাছাড়া সকালে উঠেই শরীর যদি পানি জাতীয় কিছু পায়, তবে তা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে একই রকম শারীরিক পরিশ্রম করেও আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধির কারণে ওজন কমতে পারে।
লেবু-মধু পানীয় বানানোর প্রণালি : 
এক গ্লাস হালকা বা কুসুম গরম পানি, আধা চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ মধু। গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন লেবু-মধু পানীয়। আপনি চাইলে এর সঙ্গে সবুজ চা মেশাতে পারেন।
যা লক্ষ্য রাখবেন :
-আগে পানি হালকা গরম করে তারপর লেবু ও মধু মেশাবেন। মধু কখনও গরম করতে যাবেন না।
-যদি ঠাণ্ডা পানিতে এটি পান করেন, তবে বিপরীত ফল হবে। মানে আপনার ওজন বাড়বে।
লেবু-মধু পানীয়ের উপকারিতা : 
-এই পানীয় শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। শরীরের ভেতরের নালিগুলোর সব ময়লা বের করে দেয়।
-মেটাবলিজম বা হজম শক্তি বাড়ায়, ফলে ওজন কমে।
-ঠাণ্ডা লাগলে এই পানীয় কফ বের করতে সাহায্য করে এবং ঠাণ্ডা লাগলে গলাব্যথা করলেও এটি উপকারী।
-এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
-শরীরে শক্তি বাড়ায়, অলসতা কমায়।
-কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কখন খাবেন : 
সাধারণত সকালে উঠেই প্রথম পানীয় হিসেবে খালি পেটে এটি খাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরে সকালের নাস্তায় খেতে পারেন।
মধুর উপকারিতা :
•    মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ আলাদাভাবে থাকে, কিন্তু চিনিতে তা একসঙ্গে থাকে। ফ্রুকটোজ তাড়াতাড়ি গ্লুকোজের মতো শরীরে ক্যালরি হিসেবে জমা হয় না। তাই চিনির মতো মধু সহজে ক্যালরি জমা করে না। ফলে অল্প মধু খেলেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম।
-মধু শরীরকে রিলাক্স করে, মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে এবং সহজে ঘুমিয়ে পড়া যায়।
•    মধু প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে পরিচিত। যা শরীরের সব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে ইনফেকশন দূর করে। ফলে শরীরের কাজ করার প্রণালিগুলো উন্নত হয় এবং মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।
•    মধু হজমে সহায়ক। তাই বেশি খাবার খাওয়ার পরে অল্প মধু খেতে পারেন।
•    মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে।
•    মধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। তাই মধু সহজে হজম হয়।
•    চোখের জন্য ভালো।
•    গলার স্বর সুন্দর করে।
•    শরীরের ক্ষত দ্রুত সারায়।
•    আলসার সারাতে সাহায্য করে।
•    নালীগুলো পরিষ্কার করে।
•    ঠাণ্ডা লাগলে জ্বর, গলাব্যথায় ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
•    মধু এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।
•    বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
•    শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়ায় ও তারুণ্য বাড়ায়।
লেবুর উপকারিতা :
•    লেবুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা এন্টিসেপটিক ও ঠাণ্ডা লাগা প্রতিরোধ করে।
•    লেবুর এই উপাদানগুলো টনসিল প্রতিরোধ করে।
•    এছাড়া লেবুর ভিটামিন সি ক্যান্সারের সেল গঠন প্রতিরোধ করে।
•    লেবু বুক জ্বালা প্রতিরোধ করতে ও আলসার সারাতে সাহায্য করে।
•    লেবু আর্থাইটিস রোগীদের জন্য ভালো।
•    লেবু শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে।
•    লেবু এন্টিঅক্সিডেন্ট। তাই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বক পরিষ্কার রাখে। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।
•    কালোদাগ ও ত্বকের ভাঁজ পড়া কমায়।
•    লেবু ওজন কমাতে সাহায্য করে।
•    লেবু হজমে সহায়ক ও হজমের সমস্যা দূর করে।
•    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
•    শরীরের ভেতরের টক্সিন দূর করে, অন্ত্রনালী, লিভার ও পুরো শরীরকে পরিষ্কার রাখে।
•    পেট ফোলাজনিত সমস্যা কমায়।
•    রক্ত পরিশোধন করে।
•    ঠাণ্ডা লাগলে জ্বর, গলাব্যথায় ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
•    শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি হলে ভালো কাজ করে।
•    শ্বাসনালীর ও গলার ইনফেকশন সারাতে সাহায্য করে।
সাবধানতা :
যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা অবশ্যই এটি খালি পেটে খাবেন না। কারণ লেবু এসিটিক। তাই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে এটি খাবেন।
তাছাড়া লেবুর এসিড দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর, তাই এই পানীয় খাবার সঙ্গে সঙ্গে কুলি করবেন অথবা পানি খাবেন।
একটা কথা মনে রাখবেন, ওজন কমানোর জন্য এই পানীয় শুধুই সহায়কমাত্র। সম্পূর্ণ ওজন কমানোর প্রক্রিয়াতে অবশ্যই থাকতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত শরীর চর্চা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা। ( সুত্র: বাংলানিউজ)
লেখক : ডা. মালিহা শিফা, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স কর্মকর্তা, মেরি স্টোপস

নাসার প্রতিযোগিতায় যাচ্ছে বাংলাদেশের রোবট

 নিজেদের তৈরি একটি রোবট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসার তৃতীয় লুনাবোটিকস মাইনিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছেন মিরপুর সেনানিবাসের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ১১ জন শিক্ষক ও ছাত্র। গবেষণার জন্য চাঁদ থেকে কিভাবে ১০ মিনিটে অন্তত ১৫ কেজি বালি সংগ্রহ করা সম্ভব তা ৮০ কেজি ওজনের এ রোবট দেখিয়ে দেবে। শুধু এমআইএসটির মেধাবী কয়েকজন ছাত্রের উদ্ভাবিত রোবমিস্ট নামের এ রোবটই নয়, বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও আইইউটির তৈরি আরো দুটি রোবট অংশ নিচ্ছে এ প্রতিযোগিতায়। মোট প্রতিযোগীর সংখ্যা ৬৯। এ প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে পুরস্কার পাওয়া পরের বিষয়, এতে অংশ নিতে পারাটাকেই বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি ব্রিফিং সেশনে এমআইএসটির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল হামীদ-আল-হাসান তাঁর লুনাবোটিকস দলের সদস্যদের বলেন, ‘তোমরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছ- এটাও অর্জন। পুরস্কার নিয়ে আসতে পারলে সেটি হবে আরো বড় বিষয়।
লুনাবোটিকস দলটি এ সময় তাদের উদ্ভাবিত রোবটের বিস্তারিত বিষয় উপস্থাপন করেন। দলটিতে রয়েছেন এমআইএসটির অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চার শিক্ষার্থী জালাল উদ্দিন, বদিউজ্জামান ও রেজওয়ানুল হক জাহিদুল ইসলাম এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মোহাম্মদ ইউসুফ। এঁরাই এ রোবটটি তৈরি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আগামী ২১ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত কেনেডি স্পেস সেন্টারে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
চন্দ্রবট : এদিকে এ প্রতিযোগিতায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্স টিমের তৈরি যে রোবটটি লড়তে যাচ্ছে তার নাম ‘চন্দ্রবট’। মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড এ ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আইনুন নিশাত গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনডোর গেমস রুমে এ চন্দ্রবটের উদ্বোধন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক ছাড়াও রবির ব্র্যান্ড ও মার্কেট কমিউনিকেশন্স বিভাগের এঙ্িিকউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট জাবিদ আহসান ও জেনারেল ম্যানেজার গাজী ইমরান আল-আমিন উপস্থিত ছিলেন।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয়বারের মতো নাসা থেকে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি পায়। এবারের প্রতিযোগিতার জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় উপদেষ্টা ড. মো. খলিলুর রহমান, ড. মো. মোসাদ্দেকুর রহমান, ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন ভূঁইয়া, টিম লিডার মো. জুনায়েত হোসেন, মাহমুদুল হাসান অয়ন, কাজী মোহাম্মদ রাজিন অনিক, সারা বিনতে নাসির নাবিয়া, মিরান রহমান, নাবিল সাকের রাহী, বনী আমিন খান, ফাহিম আল হাসনাইন, মোহনা গাজী মীম ও খাইরুল হাসানকে নিয়ে এ-সংক্রান্ত দল গঠন করা হয়েছে। দলটি অতীতের বিভিন্ন সাফল্য ও ব্যর্থতা পর্যালোচনা করে লুনার এক্সাভেশনের জন্য সময়োপযোগী ও বাস্তবধর্মী একটি মডেল তৈরি করেছে।

বাজারে আসছে পানি ও রাস্তায় চলা গাড়ি ‘সি লায়ন’


পিচ রাস্তা আর জলের ওপর দিয়েও চলবে এমন গাড়ির কথা কিছুদিন আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। এরই মধ্যে কেউ কেউ উভচর গাড়ি তৈরির ঘোষণা করলেও এবার গতির রেকর্ড ভেঙ্গে বাজারে আসছে নতুন উভচর গাড়ি ‘সি লায়ন’।
গাড়িটি একই সঙ্গে ডাঙ্গায় ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার ও জলে ৬৫ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। দীর্ঘ ছয় বছর পরিকল্পনা শেষে মার্ক উয়িট নামে এক ব্যক্তি এই গাড়িটি তৈরিতে সক্ষম হন। অ্যালুমনিয়াম ও স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি গাড়িটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৭৪ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন।
এছাড়া পুরোপুরি ওয়াটার গ্রুপ গাড়িটি এমন ভাবে তৈরি হয়েছে যে যা জলে রেকর্ড পরিমান গতি তুলতে সক্ষম। গাড়িটি ইতিমধ্যেই সবচেয়ে গতি সম্পন্ন উভচর গাড়ির খেতাব জিতে নিয়েছে। এর গতি নিয়ে গাড়িটির আবিষ্কারক মার্ক বলেছেন, ‘অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম এমন একটা গাড়ি তৈরি করব যেটা জলে-স্থলে দুটোতেই চালান যাবে। সেই স্বপ্ন সত্যি কতে পেরে দারুণ লাগছে।’ গতি প্রেমিকরা হয়তো ভাবছেন গাড়িটির দাম কত পড়বে? বেশি নয়, সি লায়নকে আপনার গ্যারেজে রাখার জন্য খরচ করতে হবে মাত্র ২১ কোটি ২৭ লাখ ৯ হাজার টাকা বা ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ ডলার।

মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১২

কিছু মাসুদ ভাইয়ের গল্প / মো: মাহমুদুর রহমান সুজয়


আজ খুব বৃষ্টি হলো । আমার জীবনে এত বৃষ্টি দেখিনি । রেডিওর ব্যাটারিও শেষ দোকানে যেতে হবে দুটা ব্যাটারি কিনতে । দেখি বৃষ্টি কিছুটা কমলে দোকানে যেতে হবে 
এসব কথা ভাবছিলেন মাসুদ রানা । একজন সুঠাম দেহের অধিকারি মাথা ভর্তি চুল বয়স ২৬ এর কাছাকাছি । রেডিওর কোন অনুষ্ঠান শোনা বাদ দেননা  তাই সপ্তাহে দুটা করে ব্যাটারি বদলাতে হয় । আজও তার ব্যাটারি শেষ । কিন্তু কিছুক্ষন পরে খবর শুরু হবে । খবর না শুনলে রাতে তার ঘুম হয় না । তাই বৃষ্টিতে সামান্য ভিজেই দোকানে গেলেন ব্যাটারি আনতে 
ব্যাটরি নিয়ে বাসায় এসে দেখে জানালা খোলা বৃষ্টির পানি এসে মেঝে ভিজে গেছে । তারাতারি জানালা লাগিয়ে বসে পরলেন খবর শুনতে । খবরে বলা হচ্ছে ঢাকা শহর খুব উত্তাপ্ত ছাত্ররা খুব আন্দোলন করছে পশ্চিম পাকিস্থানের বিরোদ্বে । মাসুদ ভেবে পায়না এত আন্দোলনের কি হলো । খালি একবার হাই তোলে বললো হাইরে দেশ এই দেশে রাজনীতি করার কি হলো । সবাই আন্দোলন আন্দোলন করে আন্দলোন করে কি হবে ?
এইসব বলতে বলতে ঘুমে ধরে গেল । রেডিওতে এখন একটি গানের অনুষ্ঠান হচ্ছে সম্ভবত মান্নাদের গান হচ্ছে । রেডিও বন্ধ করে মাসুদ ঘুমাতে যায় 
সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখে বাইরে বৃষ্টি নেই । তাই তারাতারি রেডি হয়ে বাজারে দোকান খোলতে যায় । যাওয়ার সময় বলে যায় মা দুপুরে আজ খেতে আসবো না । এই বলে হাতে রেডিওটি নিয়ে বাজারের দিকে রওনা হলো রাস্তায় তার বন্ধু আরিফের সাথে দেখা । কি খবর আরিফ ঢাকা থেকে কবে আসলি আরে মাসুদ তোর কাছেই যাচ্ছিলাম ,বললো আরিফ । কেন কি মনে করে না তেমন কিছু না সকাল দশটার খবর শুনতে হবে আর আমার রেডিওটা ঢাকায় রেখে এসেছি । ও আচ্ছ এখন তো দশটা বাজতে আরও ২০ মিনিট আছে চল দোকানে গিয়ে খবর শুনি বললো মাসুদ । আচ্ছা আরিফ খবরে শুনি ঢাকায় এত গন্ডগোল এর কারন কি কিসের এত আন্দোলন করছিস তোরা ?
মাসুদতারা আমাদের রক্ত চুশে নিচ্ছে তারা আমাদের উপর রাজত্ব করতে চাচ্ছে । আমরা ভোটে জিতলাম তার পরও আমাদের তারা ক্ষমতা দিচ্ছেনা 
তাহলে কি করবি আরিফ বললো মাসুদ । প্রয়োজনে যুদ্ব করবো তাদরে সাথে 
না আরিফ এটা একটা কথা বললি মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই আর তাদের বিরুদ্বে  যুদ্ব করবি বলে মাসুদ 
মাসুদ একটা কথা শুন ভাই যখন ঘাড়ে উঠে তখনও সেটা মানা যায় কিন্তু যখন সে ঘাড়ে উঠে মাথার চুল টানে তখন নামিয়ে দিতে হয় । আর আমরা সেটাই করবো । কথা বলতে বলতে বাজারে এসে পরলো 
এখানে মাসুদের ছোট একটি মনিহারি দোকান আছে  দোকান খোলে ঝাড়ু দিয়ে রেডিও চালু করতেই দশটার খবর শুরু হলো । খবরে সেই একই কথা ঢাকার আন্দোলন চলছে । ছাত্ররা মিছিল করছে প্রতিদিন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা জমা হচ্ছে মিছিল করার জন্য । খবর শুনতে শুনতে মাসুদ বললো আচ্ছা আরিফ তোরাকি পারবি এই দেশটাকে মুক্ত করতে । আরিফ বলে অবশ্যই পারবো ৫২ এর ভাষা আন্দোলনেও আমরা আমাদের অধিকার নিয়েছি এবারও আমরা পাবরো  মাসুদ একটু উদাস হয়ে বলে হুম তাই কর আমরা তো আর পারবো না তোরা শিক্ষিত মানুষ তোরা যেটা ভালো সেটাই করবি 
আচ্ছা ঢাকা যাচ্ছিস কবে ?
কাল দেখি যাওয়া যায় কিনা । আচ্ছা মাসুদ তুই থাক আমি যাই আমাকে একটু গঞ্জে যেতে হবে । আচ্ছা যা রাতে আসিস এই বিষয়ে আলাপ করবো । বললো মাসুদ 
মাসুদ সারাদিন ভাবে এই দেশে কি এসব হচ্ছে সবাই অধিকার নিয়ে ব্যাস্ত কিন্তু তারা কি নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারবে ?
এদিকে মাসুদের মা মাসুদকে বিয়ে করাবে এ নিয়ে উদ্বেগ । প্রতিদিনই পাত্রীর সন্ধান করে ঘুরছেন । আগামীকাল রসুলপুর যাবে পাত্রী দেখতে এনিয়ে পাশের বাড়ির মানুষের সাথে নানা আলোচনায় সারাদিন ব্যাস্ত হামিদা বানু । প্রাত্রী এই রকম সেইরকমঘটক বলেছে । এসব আলোচনা করতে করতে পান চিবাচ্চে এই মুহূর্তে হামিদা বানুর মত সুখি মানুষ এই পৃথিবীতে  কেউ নেইযে কেউ তাকে দেখলে তাই ভাববে । তার স্বামী মারা গিয়েছে গত দুই বছর আগে রক্ত বমি করতে করতে একরাতে তিনি মারা যান । এরপর মাসুদই তার বাবার দোকান দেখা শোনা শুরু করে 
এখন রাত সাতটা বাজে আরিফের আসার কথা এখনও আসলোনা ব্যাপার কি এই কথা ভাবতেই আরিফ এসে গেল তার সাথে আরও দুজন তাদেরকে মাসুদ কখনও দেখেনি আরিফ মাসুদকে বললো মাসুদ এরা আমার ঢাকার বন্ধু ভার্সিটিতে বিশেষ গন্ডগোলের জন্য তারা এখানে চলে এসেছে পুলিশ যাকে পাচ্ছে তাকই ধরে নিয়ে যাচ্ছে 
কেন ধরছে কেন মাসুদ খুব বিচলিত হয়ে বললো 
আরে মাসুদ এরা সবাই আন্দোলনের সাথে জড়িত । তাই পুলিশ এদের খুজছে । এই বলে আরিফ তার দুই বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় । একজনের নাম রাজু আরেক জনের নাম কামাল । রাজুর বয়স ২২-২৪ বছরের মধ্যে হবে খুব হেংলা মনে হয়ে সামান্য বাতাসে উড়ে যাবে । আর কামাল একজন সাস্থবান মানুষ অনেক লম্বা । বয়স হবে হয়ত ২৫ এর কাছাকাছি । আপনারা বসুন বললো মাসুদ । তারা সবাই বসে এরি মধ্যে মাসুদের মা এসে পরে ,
কাল মাসুদের জন্য পাত্রী দেখতে যামু আরিফ । আরিফ বলে কোন এলাকায় যাকেন খালা ?
রসুলপুর আলি শেখের মাইয়া হুনছ বাবা মাইয়াটা দেখতে বলে এহবারে পরির লাহান 
আপনি কিভাবে জানলেন মেয়ে পরির মত দেখতে আরিফ হেসে হেসে প্রশ্ন করে  
আরে বাবা আমি জানিনা ঘটক কেইলো । আচ্ছা এরা কারা আরিফ ?
এরা আমার বন্ধু ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছে । ও আইচ্ছা ঠিক আছে আমি এহন নমজ পরমু  আচ্ছা খালা যান নামাজ পড়েন । আর খালা আপনি নামাজে একটু আমারে মায়ের জন্য দোয়া করবেন কেন আরিফ তুমার মায়ের কি অইচে না কিছু না মা আজ খুব অশান্ত মায়ের সন্তানেরা আজ মায়ের সম্মান বাচাতে খুব ব্যাস্ত 
তুমাগো কথা কিছু বুঝিনা । শিক্ষিত মানুষের এই এক সমস্যা তাগরে কথা বুঝা যায় না এই কথা বলতে বলতে মাসুদের মা চলে যায় 
মাসুদ তুই বিয়ে করতাছস আর কিছু জানাইলিনা আরিফ অভিমানের সুরে বলে 
আরে মা তো আমাকে পারলে প্রতিদিনই একটি করে বিয়ে করায় এই বলে হা.হা.হা….. করে হেসে দেয় মাসুদ । সাথে সাথে সবাই হসে রাজুকামাল ও হাসে তারা এই মুহূতে ভুলে গেছে যে তারা এক বিশেষ সমস্যা  আছে সবাই আলাপ করতে করতে রাত দশটা বেজে গেল । তখন আরিফ বললো মাসুদ আমরা যাই অনেক রাত হয়ে গেছে । আজ থাকই তোরা সবাই সারারাত গল্প করি । আরিফ রাজু কামালকে বললো থাকবি তারা বললো থাকা যায় সারারাত গল্প করিনা অনেকদিন হয় । তারা সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দিল 
পরদিন মাসুদ দোকান খোললো দুপুর ১ টার পর । আরিফ তার দুই বন্ধু নিয়ে গ্রামে ঘুরাঘুরি করছে । তারা ৩ টার সময় বাজারে আসবে বলেছে মাসুদ এখন ২ টার খবর শুনছে । ঢাকার অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে জরুরি অবস্থার মধ্যে আছে ঢাকা শহর । বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্ফিও জারি করা হয়েছে  সবাই খুব ভয়ে আছে । কখন কি হয় বলা যায় না । খবর  শুনে মাসুদের মনটা খারাপ হয়ে গেল 
এদিকে মাসুদের মা রসুলপুর গিয়েছে পাত্রী দেখতে হামিদা বানু পাত্রীর কথা যেরকম শুনেছিলেন তারচেয়ে পাত্রীটাকে তার কাছে বেশী সুন্দ লাগছে । খুব সুন্দর একটি চেহারা চোখ দুটোবড় বড় লম্বা চুল । কি যে সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে । হামিদা বানু মনে মনে বললেন এই মেয়ে দিয়েই মাসুদ কে বিয়ে করাবে 
বিকাল ৩ টা বাজে এখনও আরিফ আসছে না । মাসুদ এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আকাশে কেমন যেন একটি রিক্ত রিক্ত ভাব । আকাশে কোন মেঘ নেইশুধু নীল । বাতাসে কেমন যেন উদাস উদাস একটা ভাবও আছে। মাসুদের মনটা হঠাৎ করে ছ্যাত করে উঠে । সে বুঝতে পারেনা তার এরকম কেন লাগছে । এসময় আরিফ আসে সাথে রাজু আছে কিন্তু কামাল নেই । কি খবর আরিফ এত দেরি কেন আর কামাল ভাই কই ?
দেরি হলো কারন আছে মাসুদ কাল শেখ মুজিব ভাষন দিবে । আর সে জন্য কামালকে ঢাকা পাঠালাম । সে সেই মাঠে উপস্থিত থাকবে । এবার মনে হয় মাসুদ আমরা জিতে যাব 
কিসের ভাষন হবে কি জিতবি ভাই তোর কথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না  
মাসুদ আজ রাতে আমরাও ঢাকা যাব তুই যাবি আমোদের সাথে ?
দেখি কি করি একটি হতাশার সুর নিয়ে বলে মাসুদ । রাতে মাসুদ তাদের সাথে ঢাকা যায় ঢাকা গিয়ে রেসর্কোস ময়দানের কাছাকাছি তারা রাতটা কাটায় । এরি মধ্যে তাদরে সাথে ২০-২৫ জন ছাত্র যোগদেয় । মাসুদের কাছে কেমন যেন বিষয়টি এডভান্চর , এডভান্চর মনে হয় । খুব মজা পাচ্ছে মাসুদ 
সকাল হলো হাজার হাজার মানুষ কোথা থেকে যেন আসতে শুরু করলো । মাঠটি কানায় কানায় ভরে গেল । এরি মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ভাষন শুরু করলেন 
মাসুদ অবাক হয়ে ভাষন শুনতে থাকলো । সে ভাবলো একটি মানুষ কি ভাবে এমন সুন্দর কথা বলে মাসুদের মনে শুধু একটি কথা বাজতে থাকলো এবারের সংগ্রাম আমদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রমা আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম । কোন ভাবেই সে এই কথাটি তার মস্তিস্ক থেকে বের করতে পারছিলো না । আস্তে আস্তে যেন আওয়াজটি তার কানে জোরে জোরে বাজতে থাকলো । সে একটি নেশার মধ্যে পরে গেল । মাসুদ ভাবতে থাকলো এই দেশ না থাকলে আমারে থেকে লাভ কি । আমি আছি এই সাবার সাথে 
ভাষন শেষ হলো আরিফ মাসুদকে জিজ্বেস করে । মাসুদ তুই কি এখন চলে যাবি আমাদের একটু কাজ আছে । মাসুদ ভাঙ্গা কন্ঠে বলে আচ্ছা আরিফ যাদের লেখাপড়া নেই তারা কি তোদের সাথে দেশের জন্য কিছু করতে পারবে এই কথা বলতেই আরিফ মাসুদকে জড়িয়ে ধরে ফেললো । মাসুদ আবেগ ধরে রাখতে পারলো না সে কেঁদে ফেললো 
আজ রাতে মিটিং আছে সবার সাথে সেখানে দেখা হবে । এই বলে আরিফ রাজু এবং মাসুদকে নিয়ে চলে গেল 
রাত ১২ টা কিংবা তার উপরে বাজে সাবাই একটি ঘরে বসে আছে । এদিকে শহরের অবস্থা খুব খারাপ । সারা শহরে পুলিশ গিজগিজ করছে । এর মধ্যে সবাই যে কি ভাবে আসলো ভেবে পায়না মাসুদ 
কথা শুরু হলো । আরিফ কথা বলছে আজ আমরা যুদ্ব করার সনদ পেয়ে গেছি । যুদ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে । আমরা তো বেশী কিছু চাইনি শুধু চেয়েছিলাম আমাদের অধিকার কিন্তু তারা আমাদের সেটাও দিবে না । তারা আমাদেররক্তে মজা পেয়ে গিয়েছে । কিন্তু আমরা তা মানি না আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত কিন্তু দেশের ইজ্জত দিব না । আমরা সবসময় র্নিযাতিত হয়েছি । কিন্তু আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে এখন আমরা হয়ত মরবো না হয় মারবো 
কথা বলে যাচ্ছিলো আরিফ মাসুদ খুব মনযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনছিলো । মাসুদ সব ভুলে গিয়ে মনে মনে সিদ্বান্ত নিল আমিও এই দেশের জন্য কিছু একটা করবো 
সব শেষে সিদ্বান্ত হলো সবাই যুদ্বে যোগ দিচ্ছে । সবাই কাল নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে আন্দোলন গরে তোলবে । এই বলে সবাই বিদায় নিল । এদিকে যুদ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে । আরিফ রাজু ,মাসুদ এজ আবার কামালও এসে পরেছে। এরা সবাই এক হয়ে গ্রামে  চলে আসলো । গ্রামে রাতে একটি মিটিং ডাকলো আরিফ সেখানে গ্রামের প্রায় যুবক উপস্থিত থাকলো । আরিফ দেশের এই পরিস্থিতির কথা তুলে ধরলো  যুদ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে সেই কথাও বললো প্রায় যুবকই যুদ্বে যাবে বললো  আরিফ বললো আমরা আমাদের গ্রামেই প্রশিক্ষন নিব । আমি কাল ঢাকা গিয়ে সেক্টর কমান্ডারের সাথে কথা বললো । পরদিন আরিফ ঢাকা গিয়ে কমান্ডারের সাথে কথা বললে কমান্ডার তাকে একজন প্রশিক্ষক দিয়ে দেন এবং পরবর্তিতে অশ্ত্র নিয়ে যেতে বলে দেন প্রশিক্ষকের নাম সামউল ইসলাম । আর্মিতে কাজ করতেন কিন্তু যুদ্ব চলছে বলে তিনি মুক্তিযুদ্বাদের প্রশিক্ষন দিচ্ছেন একজন বলশালী মানুষ হাতে মনে হয় বাঘের শক্তি এই বিসয়টি আরিফ বুঝলো যখন আরিফের কাছ থেকে ব্যাগ নিল তখন এমন ভাবে টান দিল যেন হাতসহ ছিড়ে যাবে 
আরিফ গ্রামে প্রশিক্ষক নিয়ে এসে পরেছেন এই খবর সেইসব যুবকের কাছে পৌছে গেল আজ রাতে আবারো একটি মিটিং ডাকা হলো আকাশে চাদ নেই চারিদিকে অনেক অন্ধকার । একটি বোগা (বড় বাতি) জ্বালিয়ে  মির্টিং শুরু হলো আরিফ প্রশিক্ষকের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন আর কাল থেকে প্রশিক্ষন শুরু হবে বলে জানিয়ে দিলেন 
এদিকে মাসুদের মা মাসুদকে বিয়ে করাবে বলে পাগল হয়ে গিয়েছে । মাসুদ যতই বলেযে দেশের পরিস্থিতি ভালো না এখন বিয়ে করা সম্ভব না তার মা ততই বলে ,দেশের সাথে তর বিয়ার সর্ম্পক কি । এরকম মাইয়া আর ১৪ গ্রামে খুজলে আর পাইবনা  মাসুদ কথা কানে না নিয়ে ভাবছে । আজ বিকালে ট্রেনিং কিন্তু বাজারে দোকানও খোলতে হভে কি করা যায় । ভেবে ভেবে বলে ,একটি দেশ বড় না আমার দোকান বড় ?
বিকালে ট্রেনিং শুরু হলো সবাই খুব ইৎসাহের সাথে ট্রেনিং করলো । সামনের সপ্তাহে গুলি করা শিখানো হবে শুনে সবাই আরও একসাইটেট হলো । খুব সুন্দর ভাবে ট্রেনিং  র্কাযক্রম শেষ হওয়ার পর এখন একেক জনকে একেক সেক্টরে পাঠানো হবে বলা  হলো । মাসুদ আর রাজু এক সেক্টরে পরলো আর আরিফ আর কামাল আরেক সেক্টরে  কারো সাথে আর কারো দেখা হবে না এই ভেবে অনেক কষ্ট হলো সবার । আরিফ মাসুদকে বলে মাসুদ জীবনে আর দেখা নাও হতে পারে । সবসময় মনে রাখবি এই দেশের এখন সব দ্বায়িত্ব তোর কাছে তোর হাতে এই দেশের ভবিষ্যত লুকিয়ে আছে । নিজের দিকে খেয়াল রাখিস । এই বলে আরিফ বাসে করে চলে গেল । আরেক দিকে মাসুদ বাড়ি থেকে  মায়ের কাছে বিদায় নিচ্ছিলো  কিন্তু মাসুদের মা তাকে বিদায় দিবেনা  সে বলে । বাবা আমি তোকে বিয়ে করাইতে চাইলাম আর তুই যাবি যুদ্বে আমি তরে যাইবার দিমু না । তুই বাবা যাইসনা । আমি একলা একলা এই বাড়িতে থাকবার পারমুনা 
মাসুদ তখন তার মাকে বলে মা শুন তুমি যেমন অসুস্থ হলে আমি তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই তোমার কিছু হলে যেমন আমি পাগল হয়ে যাই ঠিক তেমন এই দেশ্ও একটি মা আর এই মায়ের জন্যই আমি যুদ্বে যাব মা শুধু দোয়া করো আমি যেন এই মাকে বাচাতে পারি । মাসুদ তার মার উত্তরের আশায় না দাড়িয়ে চোখে পানি নিয়ে বেরিয়ে পরলো 
দেশ স্বাধীন হলো মাসুদ যুদ্ব থেকে বাড়ি ফিরলো বাড়ি গিয়ে দেখলো তার সেই বাড়ি আর নেই পুড়ে দিয়েছে হানাদারেনা । যুদ্বে মারা গিয়েছে আরিফরাজু কামালও এক পা হারিয়ে এখন পঙ্গু । এরপর একসময় মাসুদের বাড়ির জায়গা রাজাকারেরা নিয়ে নিল । বাজারের দোকানও পুড়িয়ে দিয়েছে সেই অনেক আগে 
আজ অনেক দিন পর যখন ৪০ বছর পার হয়ে গিয়েছে তখন মাসুদ ঢাকার রাস্তায় ভিক্ষা করে । মাসুদকে একরাব একজন মুক্তিযুদ্বা ভাতার ব্যবস্থা  করে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু মাসুদ তা নেয়নি  সে বলে আমার বন্ধু এবং আমি যুদ্ব এই ভাতার জন্য করিনি । আমরা যুদ্ব করেছিলাম মায়ের জন্য । মায়ের সম্মান বাচিয়ে টাকা নেই না । লোকটি এসব কথা শুনে  বললো ফকিরের বাচ্চার আবার কত বড় বড় কথা 
কিন্তু আজ্ও সে নিজের কাছে  গর্বিত নিজেকে অনেক বড় মনে করে মাসুদ । ভাবে আমি যদি যুদ্ব না করতাম তাহলে তোমরা এই গাড়ি বাড়ি করতে পারতে না । এটাই ভেবে   সে প্রতিদিন ঘুমায়  কিন্তু আজ তার কাছে আর সেই রেডিওটি নেই । তাই ব্যাটারিরও চিন্তা নেই । সে আর খবর শুনে না শুনেনা ঢাকার অবস্থা উত্তপ্ত 
মাসুদ আজও সেই রেসর্কোস ময়দানের পাশে শুয়ে থাকে ভাবে আবার একদিন বঙ্গবন্ধু হয়ত বলবে এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম 

-- 
মো: মাহমুদুর রহমান সুজয়